গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরুর তিন মাস পরও টাকা দিচ্ছে না মালিক। ওদিকে দেশে টাকা পাঠানোর জন্য সালমা চাপ আসছে পরিবার থেকে। জমি বিক্রি আর ঋণ করে বিদেশবাড়ি এসেছেন দু’পয়সা রোজগারের জন্য। তাই পাওনা বকেয়া বেতনটা চেয়েছিলেন মালিকের কাছে। এটাই হয়ে গেল অপরাধ!
চুয়াডাঙ্গার শিবপুর গ্রাম থেকে সৌদি যাওয়া সালমা খাতুনের ওপর নেমে এলো নির্মম নির্যাতন। শরীরের সর্বত্র গরম শিকলের ছ্যাঁকা আর মারধর। বর্বরতার যেন চুড়ান্ত। এভাবে চলতে থাকলো দিনের পর দিন, মাসের পর মাস।
অবশেষ একদিন কোনোভাবে সৌদি পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। তবে নির্যাতনকারী মালিকের কোনো বিচার না করে সালমাকে পাঠিয়ে দেয় বাংলাদেশে। দেশে ফেরার পর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সালমা চিকিৎসাধীন আছেন চুয়াডাঙ্গার একটি হাসপাতালে।
চিকিৎসকরা বলছেন, মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন সালমা। হাত-পায়ে অসংখ্য পোড়া দাগ। গরম ধাতবের ক্ষত শুকায়নি এখনও। হাসপাতালের বিছানায় অসহ্য যন্ত্রনায় কাটছে তার প্রতিটি ক্ষণ।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি কনসালটেন্ট তারিক হাসান শাহীন বলেন, শারিরীকভাবে তো তার অবস্থা খুবই খারাপ। তবে তার চেয়ে বেশি খারাপ মানসিক অবস্থা। তিনি বিধ্বস্ত।
স্বজনরা জানান, ভালো বেতনের লোভ দেখিয়ে গত জানুয়ারিতে সালমা খাতুনকে বিদেশে পাঠায় আলমডাঙ্গা উপজেলার আদম ব্যাপারি হাবু। বিদেশে যাওয়া বাবদ নিজের সামান্য জমি বিক্রির দেড় লাখ টাকা তুলে দেয় দালাল হাবুর হাতে। সৌদি আরবে পৌঁছে রিয়াদের একটি বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন সালমা।
সালমা বলেন, তাকে প্রতিদিন গরম শিকল দিয়ে ছ্যাঁকা দেয়া হতো। খেতে দেয়া হতো না ঠিক মতো।
এদিকে সৌদিতে সালমার ওপর দফায় দফায় নির্যাতনের খবরে ভেঙে পড়েন স্বজনরা। স্ত্রীকে রক্ষার আকুতি নিয়ে দালাল হাবুর সাথে যোগাযোগ করেন স্বামী জিনারুল ইসলাম।
সালমাকে হাসপাতালে দেখতে যান চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, আমরা এ ঘটনায় দায়ী দালালদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মীকে সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস মানবাধিকার কর্মীরাও।
/কিউএস
Leave a reply