প্রেমিকা নিয়ে দ্বন্দ্বে খুন হয় রাজু, লাশ নিয়ে বিপাকে পুলিশ!

|

ফরিদপুর প্রতিনিধি:

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের মাঝকান্দির দাসপাড়া গ্রামের রাজু সাহা (২২) হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। তাদের নির্মাণাধীন ভবনের রাজ মিস্ত্রি জসিম মোল্যাই (২১) রাজুকে হত্যা করে মিস্ত্রিদের জন্য নির্মিত টয়লেটের ট্যাংকির মধ্যে ফেলে দেয়।

মঙ্গলবার দুপুরে ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা।

এদিকে, রাজু সাহার মৃত্যুর পর আড়পাড়া গ্রামের এক মুসলিম তরুণী (২০) দাবি করেছেন রাজু ধর্মান্তরিত হয়ে তাকে বিয়ে করেছেন। তাদের ছয়মাস বয়সী একটি সন্তানও আছে। এ প্রেক্ষাপটে ময়নাতদন্তের পর রাজুর মৃতদেহ কার হাতে তুলে দেওয়া হবে এ নিয়ে বিপাকে পড়েছে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাজু সাহা এবং রাজমিস্ত্রি জসিম দুইজনই ওই এলাকার এক তরুণীকে ভালোবাসতেন। পাশাপাশি জসিমের স্ত্রী আট মাসের সন্তান সম্ভাবা। এ সময় তার অনেক টাকা প্রয়োজন। এ দুটি কারণে জসিম হত্যা করে রাজুকে। হত্যার পর রাজুর হাতের দুটি আংটি, একটি ব্রেসলেট ও দুটি মুঠোফোন হাতিয়ে নেয় জসিম। জসিমকে তার শ্বশুর বাড়ি তেকে গ্রেফতার করা হলে তিনি পুলিশের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করে বক্তব্য দেন।

জসিমের বাড়ি রাজবাড়ির বালিয়াকান্দি উপজেলার বামুন্দি গ্রামে। মঙ্গলবার ভোররাতে তাকে বোয়ালমারী উপজেলার কাদিরদি চরপাড়া হতে পুলিশের একটি দল গ্রেফতার করে। এ সময় তার দেখানো তথ্য অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি রডসহ নিহতের দুটি সোনার আংটি, একটি ব্রেসলেট ও মোবাইলফোন উদ্ধার করা হয়।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা জানান, জসিম রাজুদের নির্মাণাধীন দ্বিতল ভবনের রাজমিস্ত্রির কাজ করছিল। সেই সুবাদে সে রাতের বেলায় নির্মাণাধীন ওই ভবনেই থাকতো। আর রাজুর মা অরুনা রানী সাহা ও বোন তৃষা রাণী সাহা কিছু দূরে একটি বাসায় থাকতো। গত শনিবার দিবাগত রাতে রাজু জসিমের সাথে নব নির্মিত ভবনে রাত কাটান। ওই রাতে জসিম তাকে লোহার এঙ্গেল দিয়ে হত্যা করে পরে টয়লেটের ট্যাংকির মধ্যে লুকিয়ে রাখে।

এদিকে, নিহত রাজুকে স্বামী দাবি করে তাকে মুসলিম রীতিতে দাফনের জন্য পুলিশের নিকট আবেদন করেছে ৬ মাসের শিশু সন্তানের মা জাকিয়া খান (২০)। তার দাবি, ঢাকার সিএমএম কোর্টে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে ২০১৮ সালের ৫ জুন রাজু ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হয়। রাজু সাহা হতে নিজের নাম পরিবর্তন করে মাহমুদ আহমেদ রাখেন। ওই বছরের ৭ জুন নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে তাদের বিয়ে হয়। ৬ মাসের শিশু সন্তানটিও তাদের। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাকিয়ার দেয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই করার জন্যে মধুখালী থানার একজন কর্মকর্তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। জাকিয়ার বাড়ি মধুখালির আড়পাড়া গ্রামে। পিতার নাম জাকির খান।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা বলেন, রাজু ধর্মান্তরিত হয়েছিল কিনা এবং জাকিয়ার সাথে তার বিয়ে হয়েছে কিনা তা যাচাই বাছাই করার পর রাজুর লাশ হস্তান্তর করা হবে। তিনি বলেন, রাজুর ধর্মান্তরিত ও বিয়ের বিষয়টি তার পরিবার অবগত নয়। বর্তমানে রাজুর লাশ ফরিদপুর ডায়াবেটিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে।

এ ঘটনায় নিহত রাজুর মা অনিমা রানী সাহা অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে গত সোমবার মধুখালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। জসিমকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।

ইউএইচ/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply