বাগেরহাটে দুই স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর বাড়ি ও নির্বাচনী অফিসে হামলা

|

বাগেরহাট প্রতিনিধি:

বাগেরহাটে দুই স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর বাড়ি ও নির্বাচনী অফিসে হামলার ঘটনা ঘটেছে। উপজেলার তেলিগাতী ও বনগ্রাম ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারকালে সহিংসতায় ৩৩ জন আহত হয়েছে।

হামলার পৃথক দু’টি ঘটনায় ১১টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। আহতদের মধ্যে ৬ জনকে বাগেরহাট হাসপাতাল ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

বাগেরহাট জেলায় প্রথম ধাপে ৭০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩৯টি আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীরা বিনা ভোটে নির্বাচিত হলেও অন্য ৩০টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ানোয় তাদের মধ্যে অনেকেই এলাকা ছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে নৌকার প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে।

কচুয়া উপজেলার মঘিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মনজুরুল করিম ও কচুয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজরা জাহিদুল ইসলাম মন্নু অভিযোগ করেছেন কচুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম মাহফুজুর রহমান তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে তাদের বাড়িতে গিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য হুমকি দিয়ে আসছেন।

অভিযোগ রয়েছে, মোরেলগঞ্জের বনগ্রাম ইউনিয়নের বহরবৌলা গ্রামে শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সাবেক চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল জব্বার মোল্লার বাড়িতে হামলা চালায় ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী রিপন চন্দ্র দাসের কর্মীরা। হামলাকারীরা বাড়ির গেট ভেঙ্গে ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর ও তার ৫ কর্মী-সমর্থককে পিটিয়ে আহত করেছে। এ অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল জব্বার মোল্লা।

তিনি আরও জানান, এসময়ে বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী রিপন চন্দ্র দাস বাড়ি সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাড়ির ভেতর ঢুকে হামলা শুরু করলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা জড়ো হয়ে প্রতিরোধ শুরু করলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান রিপন চন্দ্র দাসসহ তার কর্মী-সমর্থকরা পালিয়ে যায়।

অপরদিকে বনগ্রাম ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী রিপন চন্দ্র দাস অভিযোগ করেন, রাতে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মিছিল শেষে বাড়ি ফেরার পথে তাদের গাড়ি বহরে হামলা করেছে স্বতন্ত্র আব্দুল জব্বার মোল্লা কর্মীরা। হামলাকারিরা ৬টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে এবং ৬ জন কর্মীকে পিটিয়ে আহত করেছ। আহতদের মধ্যে জয়দেব মিস্ত্রীকে (৩০) বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শুক্রবার রাত ১০টার দিকে একই উপজেলার তেলিগাতী ইউনিয়নে স্বতস্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খান নজরুল ইসলামের এতিমুল্লাহ রাস্তার মাথায় নির্বাচনী অফিসে হামলা চালায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মোরশেদা আক্তারের কর্মী-সমর্থকরা।

এসময়ে হামলাকারীরা হান্নান শেখ, রুবেল শেখ, পিকলু সরদার, লুৎফর হাওলাদার ও সরোয়ার শেখসহ ১৫ জনকে পিটিয়ে আহত করে বলে অভিযোগ করেছেন স্বতস্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা খান নজরুল। পরে তেলিগাতী বাজারে থাকা তার কর্মী-সমর্থকরা এগিয়ে এলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী লোকজন পালিয়ে যায়। আহতদের মধ্যে ৫ জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান এই স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী।

তেলিগাতী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান হাওলাদার জানান, ‘আমি ১৯৮৬ সাল থেকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। বর্তমান চেয়ারম্যান মোরশেদা আক্তারের শ্বশুর আ. সত্তার খান মোরেলগঞ্জ উপজেলার ৪৭ নং তালিকাভুক্ত রাজাকার। আমরা ৯ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলাম। আমরা সবাই মিলে মুক্তিযোদ্ধা খান নজরুল ইসলামকে সমর্থন দিয়েছি। বর্তমান চেয়ারম্যান মোরশেদা আক্তারের দুর্ব্যবহারে ইউনিয়নবাসি অতিষ্ঠ। তার কোন ভোট নাই। নিশ্চিত পরাজয় জানতে পেরে তিনি খান নজরুল ইসলামকে মাঠ থেকে বিদায় করার চেষ্টা করছে। গতরাতে অস্ত্রসহ হামলার খবর শুনে ঘটনাস্থলে এসে পুলিশকে খবর দেই। এলাকাবাসী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।

তবে, আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মোরশেদা আক্তার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার কর্মীদের ওপর দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মীরা হামলা করে। হামলায় হালিম খান, মনি খান, মনির শেখ, উজ্জ্বল শেখসহ ৮ কর্মী আহত হয়েছেন। এসময়ে ভাঙচুর করা হয়েছে ৫টি মোটরসাইকেল বলে দাবী করেন মোরশেদা আক্তার।

মোরেলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, তেলিগাতী ও বনগ্রাম ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতার খবর শুনেছি। এ বিষয়ে থানায় এখনও কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি করলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply