জাতীয় অন্ধ সংস্থার মহাসচিব খলিলুর রহমান হত্যা মামলায় ২ জনের ফাঁসি ও ৪ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪’র বিচারক আবদুর রহমান সর্দার এই রায় দেন। রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি দু’জন হলেন রমজান আলী ওরফে রমজান ও টিপু ওরফে হিরা। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সংস্থার নেতা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মিনহাজ, হাসানুর রহমান রুবেল, মোহাম্মদ শহীদ মুস্তাফা ও জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাহিদ।
একই মামলায় জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সংস্থার আরেক নেতা আইয়ুব আলী, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নুরুল আলম সিদ্দীক, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সোহাগ হোসেন হাওলাদার এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ইয়াকুব আলী মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন।
মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সংস্থার নির্বাচন নিয়ে নিহত খলিলুর রহমানের সঙ্গে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মিনহাজ ও আইয়ুব আলী হায়দারের পক্ষের বিরোধ ছিল। এর জের ধরে ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি রাতে মিরপুর এলাকার একটি বাসায় সংস্থাটির মহাসচিব খলিলুর রহমানকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় মিরপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় তদন্ত করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মিনহাজ, আইয়ুব আলীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য পাঠানো হয়। ১৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত রায় ঘোষণা করলেন।
রায়ে আদালত বলেছেন, জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সংস্থার শত শত কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে। এই সংস্থার নেতৃত্ব ও সম্পত্তির ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে খুন, পাল্টা খুন ও একাধিক মামলা থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই সংস্থার শত শত কোটি টাকার সম্পত্তির আয় এবং বিক্রির প্রচুর টাকা থাকলেও জাতীয় পর্যায়ে সুবিধাবঞ্চিত সব দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এই সম্পত্তির আয় পাচ্ছেন—এমন কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। এর ফলে এই সম্পত্তির আয় ও সম্পত্তি বিক্রির টাকা যাতে সুষ্ঠুভাবে সমবণ্টন হয়, এ জন্য জরুরি ভিত্তিতে সরকারিভাবে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। আদালত সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে জরুরি ভিত্তিতে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
কী কারণে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী খলিলুর রহমান খুন হন, এ বিষয়ে আদালত তাঁর রায়ে বলেছেন, নিহত খলিল ছিলেন জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সংস্থার নির্বাচিত মহাসচিব। ওই সংস্থার কয়েক শত কোটি টাকা সম্পত্তি আছে। এই সম্পত্তির ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মিনহাজ ও আইয়ুব আলী হায়দারের পক্ষের বিরোধ ছিল। নির্বাচিত হওয়ার পরও খলিলুর রহমান তাঁর পদে বসতে পারেননি। শত্রুপক্ষ তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আসামি রমজান আলী টিপু সরাসরি খলিলুর রহমানকে গুলি করেন। এ মামলায় খুনের দায় স্বীকার করে রুবেল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। সেখানে এই খুনের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মিনহাজসহ অন্য আসামিদের সাজা দেওয়ার বিষয়ে তাঁদের ব্যবহার করা মোবাইলের কল রেকর্ড গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য হিসেবে আদালতে বিবেচিত হয়েছে। বিশেষ করে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মিনহাজের সঙ্গে আসামিদের কল ডিটেইলস রেকর্ড (সিডিআর) প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন আদালত।
মামলার তদন্ত নিয়ে আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তদন্ত র্কমকর্তা মিরপুর থানার সাবেক পুলিশ পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মন এবং তার তদারককারী পুলিশ র্কমকর্তাকে ‘অদক্ষ ও অযোগ্য’ বলে ভৎসর্না করেছেন তিনি। সাগর নামের এক আসামির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিবারণ চন্দ্র বর্মণের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছেন। সাগরের বিরুদ্ধে পুনরায় অভিযোগপত্র দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০১১ সালের ১ জানুয়ারি রাতে অন্ধ কল্যাণ সংস্থার মহাসচিব খলিলুর রহমান মিরপুর ১ নম্বরে শাহ আলী জনতা হাউজিংয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ইয়াকুব আলীর ভাড়া বাসায় নির্বাচনে পরাজিত সভাপতি ও মহাসচিব পদপ্রার্থীর সঙ্গে সমঝোতা বৈঠকে বসেন। সেখানেই খলিলুরকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
যমুনা অনলাইন: টিএফ
Leave a reply