পয়লা ফাল্গুন বসন্তের দিনে বইমেলায় এসেছে কথাসাহিত্যিক রবিউল করিম মৃদুল এর তৃতীয় উপন্যাস ‘জলপাই রঙের কোট’। মুক্তিযুদ্ধ ও ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে রচিত এ উপন্যাস প্রকাশ করেছে দেশ পাবলিকেশন্স। এর প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২৫টাকা।
জলপাই রঙের কোট এর ফ্ল্যাপে তিনি লিখেছেন, ‘গল্প কেবলই গল্প নয়। এ জীবনেরই এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এখানে তারই তালাশ। ইতিহাসের তলানিতে অযত্নে পড়ে থাকা এক বীরত্বগাঁথা ও মর্মংস্পর্শী জীবনবোধ তুলে আনতে বর্তমান সময়ের তিন তরুণের চষে বেড়ানো। কখনো ১৯৭১, কখনো ২০১৬, আবার কখনো ফিরে যাওয়া প্রায় শতবর্ষ আগে ১৯৩০ এর দশকে। উত্তাল ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবের সেই অগ্নিযুগের অলিগলিতে ঘোরাফেরা। তারই ভেতর জীবন্ত হয়ে ধরা দেয় মাস্টারদা সূর্যসেন, বীরকন্যা প্রীতিলতা, রেলওয়ে ডাকাতি, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন, পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ। সময়ের হাত ধরে জেগে ওঠে ৭১। মার্চের উত্তাল সেইসব দিন। পাক হানাদারদের অতর্কিত আক্রমণে বিপর্যস্ত ঢাকা, ঢাকার মানুষজন, নির্দিষ্ট একটি পরিবার। তারই ভেতর চলে প্রতিরোধ। সব বন্ধন ছিন্ন করে ঘর ছাড়ে কেউ কেউ। ক্রমেই দূর্ধর্ষ যোদ্ধা হয়ে ওঠে। এ যুদ্ধ কখনো মর্যাদার, কখনো পতাকার, কখনো কেবলই একমুঠো ভাতের। এরই ভেতর সহজাতভাবে ফুল ফোটে হৃদয়ে। মনে মন ছুঁয়ে যায় কারো কারো। ঠিক প্রেম নয়, অথবা প্রেম, অথবা তারও চেয়ে বেশি। যুদ্ধ, প্রেম, বীরত্ব, বৈপরীত্ব এইসব মিলিয়ে রবিউল করিম মৃদুল এর ‘জলপাই রঙের কোট’ মুক্তিযুদ্ধকালিন সময়ের এক জীবন্ত বয়ান।’
বর্তমান সময়ে প্রতিশ্রুতিশীল যে কজন তরুণ লেখক নিজেদের লেখা দিয়ে বেশ সাড়া ফেলেছেন পাঠক মহলে, মৃদুল তাদের মধ্যে অন্যতম। এবারের বইটি নিয়ে তিনি বলেন, ‘জলপাই রঙের কোট’ আমার পঞ্চম বই। উপন্যাসের কাতারে তিন নম্বর। একজন নির্দিষ্ট মুক্তিযোদ্ধার জীবনের সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত হয়েছে এটি। চট্টগ্রামের পটিয়া থানার অন্তর্গত গৈরলা গ্রামের সুজিত বড়ুয়া আমাদের কেন্দ্রিয় চরিত্র এখানে। তাকে ঘিরেই গল্পটি এগিয়েছে। দূর্দান্ত সাহসী সুজিতের চোখে আমরা একাত্তর দেখেছি। গল্পটি যে গ্রামের পটভূমিতে বিস্তার লাভ করেছে, তার একটা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আছে। ১৯২০-৩০ এর দশকে এই পটিয়া অঞ্চল ছিল ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবের এক অগ্নিভূমি। এই অঞ্চল মাস্টারদা সূর্যসেনের, এই অঞ্চল বীরকন্যা প্রীতিলতার। আমরা যখন আমাদের গল্পের চরিত্র মুক্তিযোদ্ধা সুজিতকে নিয়ে তার যুদ্ধ অভিজ্ঞতার গল্প শুনতে পটিয়ায় হেঁটে বেড়িয়েছি, তখন অবশ্যম্ভাবী ভাবে সামনে চলে এসেছে সূর্যসেন, প্রীতিলতা। কথায় কথায় আমরা ফিরে গেছি প্রায় শতবছর পেছনে। বলা চলে মূলত তিনটা সময়কে ধারণ করে এগিয়েছে ‘জলপাই রঙের কোট’। গল্পের ঢঙটা একটু ভিন্নতর। ঠিক প্রচলিত উপন্যাসের ঢঙে আগায়নি এটি। এ রকম একটি প্রজেক্ট হাতে নিয়ে প্রথমটায় খুব সংশয়ের মধ্যে ছিলাম। শেষ করতে পারব কি না ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তথ্য উপাত্তরও দরকার ছিল অনেক। শেষে দেখি কিভাবে কিভাবে হয়ে গেল। বইটি নিয়ে আমি ভীষণ আশাবাদী। পাঠকদের বিভিন্ন গ্রুপে এরই মধ্যে বইটি নিয়ে বেশ আগ্রহ আমি দেখেছি। তারা এটি ভালোভাবে গ্রহণ করবে বলেই আমার বিশ্বাস।’
এর আগে মৃদুলের চারটি বই প্রকাশিত হয়েছে। তার প্রথম বই গল্পগ্রন্থ ‘হলুদখাম ও বাদামী ঘাসফড়িং’ প্রকাশিত হয় ২০১৪ এর বইমেলায়। এর পর ‘শুভ্র কুসুম কৃষ্ণ কুসুম (উপন্যাস), এখানে আকাশ নীল (উপন্যাস), রকস্টার (গল্পগ্রন্থ) প্রকাশিত হয় ধারাবাহিকভাবে। কথাসাহিত্যের পাশাপাশি কবিতা, ছড়া, নাটকসহ লেখালেখির সব মাধ্যমেই সরব তিনি। লেখালিখেতেই নিয়মিত হতে চান।
Leave a reply