সরকারি কর্মকর্তাকে পিটিয়ে গ্রেফতার কুড়িগ্রামের ছাত্রলীগ নেতা

|

প্রতীকী ছবি

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

ঈদ উপলক্ষে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলায় সদর ইউনিয়ন পরিষদে ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) প্রকল্পের টাকা বিতরণ চলার সময় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় একটি মামলায় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, বুধবার (১২ মে) সকালে চর রাজিবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ভিজিএফ এর টাকা বিতরণ শুরু হয়। মাইকে নাম ডেকে টাকা বিতরণ কার্যক্রম চলে। দুপুরের দিকে রাজিবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আকবর হোসেন হিরো এবং উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল হাই কমান্ডার দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে আসেন। উপজেলা চেয়ারম্যান পিআইওর সাথে টাকা বিতরণের বিষয়ে কথা বলেন এবং পিআইও তাকে জানান দুপুরের মধ্যে টাকা বিতরণ শেষ হবে। তাদের দুজনের কথপোকথন চলাকালে পিআইও চেয়ার থেকে না ওঠায় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা পিআইওর শার্টের কলার চেপে ধরে ঘুষি মারতে শুরু করে। এ সময় তার অনুসারীরাও পিআইওকে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। পরে স্থানীয়রা চিকিৎসার উদ্দেশে রাজিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

এই বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা সৌভ্রাত দাশ জানান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আকবর হোসেন হিরো এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই কমান্ডারের নেতৃত্বে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা গতকাল দুপুরে তার ওপর হামলা চালিয়েছে। পরে কয়েকজন সহকর্মী ও গ্রাম পুলিশ তাকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়।

গত রাতেই তিনি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের ওপর পুরো দায়িত্ব না দিয়ে আমি নিজে উপস্থিত থেকে নিয়ম-নীতি অনুসারে শৃঙ্খলার সঙ্গে সুবিধাভোগীদের মধ্যে টাকা বিতরণ করায় আমার ওপর এই হামলা চালানো হয়েছে।

এই বিষয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আকবর হোসেন হিরো বলেন, পিআইও আমার সঙ্গে কথা বলার সময় চেয়ারে বসে ছিলেন। আর দুপুর একটার মধ্যে টাকা বিতরণ শেষ করার জন্য তাড়াহুড়ো করছিলেন। এজন্য স্থানীয় জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ধাক্কা দিয়েছে। ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা তার ওপর হামলা চালায়নি, বরং তারা জনরোষ থেকে পিআইওকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেছে। আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

রাজিবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ মেহেদী জানান, সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা এবং ছাত্রলীগ কর্মী আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে ফাঁসানোর জন্যই এই অভিযোগ করা হয়েছে।

রাজিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নবিরুল ইসলাম বলেন, সরকারি দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার হওয়া খুবই দুঃখজনক। পুলিশ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে, এবং হামলায় জড়িত বাকিদেরকেও আইনের আওতায় আনবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

রাজিবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নবিউল হাসান দুই ছাত্রলীগ নেতার গ্রেফতারের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সরকারি কর্মকর্তার ওপর হামলার ঘটনায় রাতেই একটি মামলা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে আসামিদের নাম ও সংখ্যা বলা যাচ্ছে না। তবে জুয়েল রানা এবং আব্দুর রহমান বিশ্বাস নামে দুজনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে বলেও তিনি জানান।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply