১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয়ের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট এগিয়েছে বেশ। বিশ্বের সেরা দলগুলোকে অন্তত ঘরের মাঠে বলে কয়েই হারাতে পারে টাইগাররা। একদশক আগেও ভালো ক্রিকেট খেলে সম্মানজনক স্কোর গড়তে মাঠে নামতো বাংলাদেশ। কিন্তু এখন টাইগাররা মাঠে নামে জয়ের লক্ষ্য নিয়ে। নিত্যনতুন নানা রেকর্ডও জমা হয় ঝুলিতে।
২০১২ সালের এশিয়া কাপ ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য একটি বড় মাইলফলক। সেবার দুর্দান্ত খেলে ফাইনাল গিয়ে মাত্র ২ রানের জন্য এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরা হয়নি টাইগারদের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নতুন করে আবার চেনে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় সাফল্য ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন ট্রফির সেমিফাইনালে খেলা। সে ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ৯ উইকেটে হারলেও অন্যরকম এক রেকর্ড গড়েছিল বাংলাদেশ। ম্যাচে ৪০.১ ওভার বল করেও কোনো অতিরিক্ত রান দেয়নি টাইগাররা। বোলাররা কোনো নো, ওয়াইড কিংবা বাই রান না দেয়ায় প্রতিটি রানই খেটে নিতে হয়েছিল ভারতীয় ব্যাটারদের।
এর আগে, বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের মতো এমন রেকর্ড গড়তে পেরেছিল শুধুই সংযুক্ত আরব আমিরাত। ২০১৬ সালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে অতিরিক্ত রান ছাড়াই সর্বোচ্চ ২২৯ রান দিয়ে গড়েছিল এই রেকর্ড। প্রায় চার বছর পর নিজেদের রেকর্ড আবারও নতুন করে নিজেদের ঘরেই রেখে দিলেন টাইগাররা। সেবার ভারতের বিপক্ষে হারলেও এবার ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিতেছে সাকিব-মুশফিকরা।
সেবারের চাইতে এক বল কম অর্থাৎ ৪০ ওভারে একটিও নো বল বা ওয়াইড বল করেননি বাংলাদেশের বোলাররা। লঙ্কান ব্যাটাররাও নিতে পারেনি কোনো লেগবাই অথবা বাই রান।
মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে মুশফিকুর রহিমের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ২৪৬ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৪০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৪১ রান করে শ্রীলঙ্কা। পরে বৃষ্টির কারণে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। বৃষ্টি আইনে ১০৩ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার গড়া ১৪১ রানের মধ্যে অতিরিক্ত কোনো রান নেই। অর্থাৎ বাংলাদেশের বোলাররা যে ২৪০টি বল করেছে সেগুলো ছিল লিগ্যাল ডেলিভারি।
এ ম্যাচে টাইগারদের অধিনায়ক তামিম ব্যবহার করেছেন মোট ৬ জন বোলারকে। তিন টাইগার পেস বোলার মোস্তাফিজ, তাসকিন ও অভিষিক্ত শরীফুল বল করেছেন মোট ১২০টি। ৬ ওভার বল করে মোস্তাফিজ তুলে নেন ৩ উইকেট। ২ দশমিক ৬৬ ইকোনোমি রেটে তিনি রান দেন ১৬। অভিষিক্ত শরীফুল ৬ ওভার বল করে ৫ ইকোনমি রেটে রান দিয়েছিলেন ৩০ আর উইকেট একটি। আরেক পেসার তাসকিন আহমেদ কোনো উইকেট না পেলেও ৮ ওভার বল করে রান দিয়েছিলেন ৩০।
স্পিনারদের মধ্যে মিরাজ-সাকিবের সাথে এই ম্যাচ বল হাতে যোগ দিয়েছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও। তিন বোলার মিলে ২০ ওভার বল করে দিয়েছিলেন মোট ৭৩। অতিরিক্ত রানের সংখ্যা যথারীতি শূন্য। মেহেদি মিরাজ ১০ ওভার বল করে রান দিয়েছেন ২৮। ইকোনমি রেট ছিলো ২ দশমিক ৮০। আর উইকেট শিকার করেছেন তিনটি। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান এই ম্যাচে বল করেছিলেন ৫৪টি অর্থাৎ ৯ ওভার। ৪ দশমিক ২২ ইকোনমি রেটে রান দিয়েছেন ৩৮। বোলারদের এই পারফরমেন্সেই প্রায় চার বছর পর অতিরিক্ত রান বিহীন একটি ওয়ানডে ইনিংস দেখলো ক্রিকেট বিশ্ব।
টেস্টে এই রেকর্ডটা ভারতের দখলে। ১৯৫৫ সালে লাহোর স্টেডিয়ামে টেস্টের প্রথম ইনিংসে পাকিস্তান ৩২৮ রানে অলআউট হয়। ভারতের বোলাররা ১৮৭.৫ ওভার বল করে। কিন্তু ওই ইনিংসে তারা একটিও অতিরিক্ত রান দেয়নি। এটাই এখন পর্যন্ত অতিরিক্ত রান না দিয়ে সর্বোচ্চ ওভার বল করার রেকর্ড।
Leave a reply