সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে সিরাজগঞ্জ উল্লাপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দীপক কুমার দাসের বিরুদ্ধে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে মামলা করলেন ভুক্তভোগী বৃদ্ধ সাইফুদ্দিন প্রামাণিক (৭০)।
মামলার বিবরণে জানা যায়, বিগত ১০ মাস আগে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বেতবাড়ী গ্রামে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ঘটনার প্রেক্ষিতে বিবাদিদের থানায় আসতে বলেন ওসি দীপক কুমার দাস, কিন্তু ঐরাতে তারা থানায় না আসার কারণে ক্ষিপ্ত হন ওসি।
অভিযোগ রয়েছে, এরই জের ধরে বিবাদিদের প্রতিরাতে পুলিশি অভিযানের নামে পুরো গ্রাম তছনছ করাসহ পুলিশি হয়রানি থেকে বাঁচতে টাকার বাণিজ্য করতে থাকে পুলিশ। চাহিদা মতো পুলিশকে টাকা না দিলে বেতবাড়ী গ্রামে পুলিশি অভিযানের নামে বিভিন্ন বাড়ীতে রাতে প্রবেশ করিয়া ভাঙচুরসহ নগদ টাকা স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং একাধিক ব্যক্তিকে মামলা ছাড়াই গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে ব্যাপক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে মোটা অংকের টাকা নেয়া হয়।
এই নির্যাতনের বিষয় নিয়ে ভুক্তভোগী গ্রামবাসী সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের নিকট সকল নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরেন। বিভিন্ন পত্রিকা ও টেলিভিশনে এই সংবাদটি প্রকাশিত হলে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ওসি দীপক কুমার দাস।
এরপর থেকে সাংবাদিকদের নিকট সাক্ষাতকার দেয়া ব্যাপ্তিগণকে একে একে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে নতুন নতুন মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠাতে থাকেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার বাদি বৃদ্ধ সাইফুল ইসলাম জানান, আমার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। তবে আমি সাংবাদিকদের কাছে পুলিশি হয়রানির কথা বলেছিলাম এটাই আমার অপরাধ। তাই গত ২৪ মে রাতে উল্লাপাড়া থানার ৪/৫ জন সাদা পোশাকে পুলিশ এসে আমাকে ধরে নিয়ে যায় থানায়।
আমি শ্বাসকষ্টজনিত রোগী আমাকে দুই এসআই হাত ধরে রাখে আর ওসি নিজে আমাকে ব্যাপক হারে মারতে থাকে। তারা আমায় লোহার পাইপ দিয়ে আমাকে ইচ্ছেমত পেটায়। আমি ওসিকে বলি আমি আপনার বাবার বয়সের আমাকে আর মারবেন না। কিন্তু তিনি কোন কথা শোনেননি। এরপরে আমি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে আমাকে রাতেই উল্লাপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করায়। এরপর ২৫ মে আমাকে চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে আদালতে চালান করে দেয়।
আদালত আমার অবস্থা দেখে ও জবানবন্দি নিয়ে আমাকে জামিন দেন এবং শারীরিক অবস্থা অবনতি দেখে চিকিৎসার জন্য সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করতে বলেন। আমি একটু সুস্থ হলে হাসপাতাল থেকে সার্টিফিকেট তুলে আজ ২৭ মে সিরাজগঞ্জ উল্লাপাড়া থানা আমলী আদালতে হাজির হয়ে এই মামলা দায়ের করি।
বাদি পক্ষের আইনজীবী মোরশেদুল ইসলাম ও নিখিল কুমার ঘোষ জানান, বাদির দায়ের করা মামলাটি বৃহস্পতিবার আমলী আদালতে উপস্থাপনের পর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আসাদুজ্জামান মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাদির শারীরিক পরীক্ষার জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের রেজিস্টার্ড চিকি৭সককে নির্দেশ দেন।
উল্লাপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দীপক কুমার দাস বলেন, সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনেক আগের একটা মামলা ছিলো। তাকে সেই মামলাতেই গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আমি কিংবা আমার কোন পুলিশ তাকে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করেনি। আদালত তদন্ত করলে সঠিক ঘটনা বের হয়ে আসবে।
Leave a reply