মাহফুজ মিশু:
আম ব্যবসার ক্ষতির কথা বলে রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁয় সর্বাত্মক লকডাউন হচ্ছে না। স্বাস্থ্য বিভাগ নানা সতর্কবাণী উচ্চারণ করলেও তা আমলেই নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। খুব শিগগিরই তা করার কথাও যতদূর জানি ভাবছে না তারা।
অথচ দেশে করোনা শনাক্তের ৮০ শতাংশ এখন ভারত থেকে আসা ভ্যারিয়েন্ট। রাজশাহীতেই মারা যাচ্ছে মোট মৃতের প্রায় ৫০ শতাংশ! গরীবের করোনা হয় না, শহরের বাইরের মানুষ এই রোগে মরে না, এসব ধারণা শতভাগ ভুল। প্রতিবেশী ভারতের ঘটনা তার বড় উদাহরণ।
আশপাশের জেলাগুলোতে চিকিৎসার ভালো ব্যবস্থা না থাকায় রাজশাহীতে চিকিৎসার হার বাড়ছে এবং তা যে হবে, সেটা জানা কথা। এমন অবস্থায় কোনো কারণেই বৃহত্তর রাজশাহীর পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক সাধারণ নির্দেশনা দিয়ে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।
৩/৪টি বা ১০টি জেলা ভয়াবহ হলে সেটাও হয়তো মোকাবিলা করতে পারবো আমরা। কিন্তু বিশ্বাস করেন, সারা দেশ বা বড় দুই শহর চট্টগ্রাম ও ঢাকায় সংক্রমণ সেভাবে ছড়িয়ে পড়লে তা নাগালের বাইরে চলে যাবে।
সবচে বড় ভয়, পরীক্ষার বিপরীতে যে প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ কোভিড পজেটিভ হচ্ছেন এসব জেলায়, তাদের চিকিৎসা হবে কোথায়? এরই মধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। অবকাঠামো, চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী সবকিছু নিয়েই বেহাল দশা। আবার মনে রাখতে হবে, এই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পুরো অঞ্চলের অন্যান্য চিকিৎসারও প্রধান নির্ভরতা। সেক্ষেত্রে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসাই বা তখন মানুষ নেবে কোথায়! সহজ কথা হলো, করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ভেঙে পড়বে পুরো রাজশাহীর স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো।
আমার নিজের জেলা বা শহর বলেই বলছি না, বাঁচার তাগিদেই অনুরোধ, লকডাউন/সাধারণ ছুটি বা বিশেষ বিধিনিষেধের মত ‘গা বাঁচানো’ প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিয়ে এখন নাটোর নওগাঁ চাঁপাই তথা বৃহত্তর রাজশাহীর পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন না। আমের যে ক্ষতি, তা মানি। প্রয়োজনে সেই টাকা ভর্তুকি দিন। বিশ্বাস করেন, জেলা-উপজেলা প্রশাসন চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান/কাউন্সিলরদের সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা সহজ ব্যাপার। কাজেই করোনা নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিন।
স্থানীয় প্রশাসনকে বিনয়ের সাথে বলতে তাই, মন্ত্রিসভার তো বটেই, সরকার প্রধানের চাওয়াও কিন্তু তাই। স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনা করে জেলা প্রশাসনই প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তে নিতে পারবে, সে কথা কিন্তু মন্ত্রিপরিষদ সচিব স্পষ্ট করে বলেছেন একাধিকবার। ফলে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ, জনস্বাস্থ্যবিদদের পূর্বাভাস আর পরামর্শ অবহেলা এবং সরকারের নীতি নিয়ে গোঁয়ার্তুমি করলে নিশ্চয় স্থানীয় প্রশাসনকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। করোনা সংক্রমণ জনস্বাস্থ্যের সবচেয়ে বড় ইস্যু এখন। সেটিকে হালকাভাবে নিলে পরিণতি ভালো হয় না, প্রতিবেশী ভারত সেটা টের পাচ্ছে। মনে রাখতে হবে, সময় গেলে কিন্তু সাধন হবে না।
লেখক: বিশেষ প্রতিনিধি, যমুনা টেলিভিশন।
Leave a reply