মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচ মানেই মাঠ আর মাঠের বাইরে বাড়তি উত্তেজনা। তেমন কিছুই আরও একবার দেখলো দেশের ক্রীড়াপ্রেমীরা। নব্বই দশক যেন ফিরে এসেছিল মিরপুরের মাঠে। তবে যা দেখা গেল তা কিন্তু পুরোপুরি মাঠের খেলা নিয়ে নয়। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে মিরপুরে উত্তেজনা ছড়িয়েছেন দেশসেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। লাথি মেরে, উপড়ে ফেলেছেন স্টাম্প, তেড়ে গেছেন প্রতিপক্ষের ড্রেসিংরুমের দিকে। সাকিবের দিকেও তেড়ে এসেছেন আবাহনীর কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন। নানা ঘটনার এমন ম্যাচে শেষমেশ চির প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে ৩১ রানে হারিয়ে টানা ৩ ম্যাচ হারের পর জয়ের ধারায় ফিরেছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব।
বৃষ্টির সম্ভাবনা নিয়ে মিরপুরে শুরু হয়েছিল আবাহনী-মোহামেডানের ঢাকা ডার্বি। আর বৃষ্টির শঙ্কায় দ্বিতীয় ইনিংসে মোহামেডানের শুভাগত হোমের করা পঞ্চম ওভারের শেষ বলটির আগে ম্যাচ থামিয়ে দিলেন আম্পায়ার।
কিন্তু এরপর যা হলো তা ক্রিকেটের জন্য সুখকর কিছু নয়। আম্পায়ারের ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে রীতিমতো যুদ্ধাংদেহী রূপে আর্বিভূত হন মোহামেডানের দলপতি সাকিব আল হাসান। আম্পায়ার মাহফুজুর রহমান লিটুর সামনে থাকা স্ট্যাম্প উপড়ে, মাঠিতে আছড়ে ফেললেন ক্ষুদ্ধ সাকিব। হাততালি দিতে দিতে সতীর্থদের নিয়ে ছেড়ে গেলেন মাঠ।
এখানেই শেষ নয়। সাকিব যখন ড্রেসিংরুমের পথে, তখন আবার তার দিকে তেড়ে এলেন আবাহনী কোচ এবং বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন। মোহামেডানের ক্রিকেটার শামসুর রহমান শুভ তখন তাকে না থামালে হয়তো তৈরি হতো আরও বড় কোনো খবর।
এর আগে নিজের করা প্রথম ওভারেও মেজাজ হারিয়েছিলেন সাকিব। ওভারটিতে মুশফিক হাঁকান এক ৬ আর ১ টি চার। শেষ বলে সাকিব লেগ বিফোরের আবেদন করলে আম্পায়ার ইমরান পারভেজ তা আমলে নেননি। ক্ষুদ্ধ সাকিব মেজাজ হারিয়ে স্টাম্পে লাথি মেরে বসেন।
খানিক পরেই ভিন্ন দৃশ্য মিরপুর স্টেডিয়ামে। বৃষ্টি থামতেই মাঠে সবার আগে সাকিব। আবাহনীর মুশফিক-সৈকতদের সাথে খুনসুটি করতে করতেই চলে গেলেন আম্পায়ারদের কাছে। কথাও বললেন কাঁধে হাত রেখে। এসব দেখে বোঝার কোন উপায়ই ছিল না যে খানিক আগে অপ্রীতিকর কিছু ঘটেছে সেখানে।
এরপর বৃষ্টি আইনে ৯ ওভারে ৭৬ রানের নতুন টার্গেট দাঁড়ায় আবাহনীর সামনে। কিন্তু তাসকিন- শুভাগতের বোলিংয়ে শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেট হারিয়ে ৪৪ রান করে আকাশী নীলের দল। আর তাতেই ৩১ রানের স্বস্তির জয় পায় সাদা কালোরা।
প্রথম ইনিংসে মোহামেডানের হয়ে চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন সাকিব আল হাসান। খেলেছেন এবারের আসরে সর্বোচ্চ ৩৭ রানের ইনিংস। শেষদিকে মাহমুদুল হাসানের ৩০ রানে ভর করে ১৪৫ রানের লড়াকু পুঁজি পায় মোহামেডান।
জবাব দিতে নেমে প্রথম ওভারেই আবাহনী হারায় ২ উইকেট আর মোহামেডানকে ভালো সূচনা এনে দেন শুভাগত। মোহাম্মদ নাইম ও আফিফকে ফিরিয়ে আবাহনীকে চাপে ফেলেন তিনি।
আবাহনী-মোহামেডানের উত্তেজনা আর হট্টগোলের এমন ম্যাচ দিয়ে মিরপুরে যেন ফিরেছিলো নব্বই দশকের মাঠের ঝাঁঝালো আমেজ। সাথে ছিল মাঠের ক্রিকেটের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতাও।
Leave a reply