এরিকসেনে জিতে গেল জীবন ও ফুটবল

|

মঞ্জুরুল ইকরাম:

সামনে ডেনিশ ফুটবলার, পেছনে গ্যালারিতে থেকে ফেলা ফিনিশ পতাকা। মাঝে জন্ম ও মৃত্যুর পার্থক্যে আশঙ্কার ফিসফিসানি। রয়টার্সের ফটো জার্নালিস্ট জানান দেন, তার ক্যামেরার লেন্সকে ফাঁকি দিতে পারেনি এরিকসেনের হাত। স্বস্তি ফেরে নিমেষেই। উয়েফার টুইট ‘হ্যাজ বিন স্ট্যাবিলাইজড’-এ দম ফেরে কোপেনহেগেনে। কিন্তু দমে যায় না কেউ। সিমন ক্যার’রা মাঠে নামেন ফিনিশদের গার্ড অব অনারে। ক্যাস্পার স্মাইকেল জড়িয়ে ধরেন সবাইকে, ম্যাথিয়াস ইয়ানসেনকে একটু শক্ত করে। ইয়ানসেন মাঠে নেমেছেন ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনের বদলি হিসেবে। বল আবার মাঠে গড়ায়।

স্মাইকেলের হাত গলে বল জড়ায় ডেনিশ জালে। কিন্তু ফিনিশদের উদযাপন কোথায়! ১৩০ বছরের ইতিহাসে ইউরোর মতো আসরে প্রতিপক্ষের জালে ফিনল্যান্ডের প্রথম গোল, উদযাপন করতে গিয়েও নিজেকে থামালেন জোয়েল, থামালেন বাকীদেরও। এখানে যে উদযাপন মানাচ্ছে না! উদযাপন হবে সেদিনই যেদিন সুস্থ হয়ে ফিরবেন এরিকসেন। শুধু কোপেনহেগেন বা ইউরোপ কেন, সেদিন পুরো ফুটবল বিশ্বজুড়েই যে হবে উৎসব, তার ছোঁয়া সবার গায়েই কি লাগেনি গতকাল?

সেন্ট পিটার্সবার্গে গোল করে লুকাকু দৌড়ে এলেন ক্যামেরার সামনে, বললেন, ক্রিস, ক্রিস, আই লাভ ইউ! গোলটি উৎসর্গও করলেন ইন্টার মিলান সতীর্থকে। জার্মানির পুরো ইউরো স্কোয়াড থাম্বস আপ দেখিয়ে ছবি আপলোড করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর পেছনে ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনের ছবি। রেফারি এ্যান্থনি টেলরের হুইসেল কতোবারই তো সমর্থকদের বুকে শেল হয়ে বিঁধেছে। কিন্তু কাল কোপেনহেগেনে হুইসেল বাজিয়ে মেডিকেল টিম ডাকতে ৫ সেকেন্ডও সময় নেননি তিনি।

এরিকসেন মাঠে লুটিয়ে পড়ার পর ডেনিশ ক্যাপ্টেন সিমন ক্যার দৌড়ে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা (ডাক্তারি ভাষায় সিপিআর) দিলেন। খেলোয়াড়রা তৈরি করলেন মানববর্ম। আর ঠিক পেছনের গ্যালারি থেকে ফিনিশ সমর্থকরা ছুঁড়ে দিলেন তাদের পতাকা। ডেনমার্কের খেলোয়াড়রা যখন দ্বিতীয়বারের মতো টানেল ধরে মাঠে প্রবেশ করছিলেন, তখন করতালি দিয়ে তাদের অভিবাদন জানাচ্ছিলেন প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফরা। আর শঙ্কার মেঘ যখন ছড়িয়ে ছিল কোপেনহেগেন থেকে গোটা বিশ্ব, স্টেডিয়ামে দেখা গেল ফিনিশ সমর্থকেরা তারস্বরে চেঁচাচ্ছেন, ‘ক্রিস্টিয়ান’, ড্যানিশ সমর্থকেরা এর চেয়েও উঁচু গলায় জবাব দিচ্ছেন, ‘এরিকসেন’! এই জায়গায় এসে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা, বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদ, মেসি-রোনালদো সবাইকে এক হয়ে যেতে দেখলো বিশ্ব। এরিকসেনে প্রাসঙ্গিক হয়ে ফিরে আসলেন লিভারপুলের কিংবদন্তী কোচ বিল শ্যাঙ্কলির সেই উক্তি- ‘কেউ কেউ বলে ফুটবল জন্ম-মৃত্যুর ব্যাপার, আমি বলি ফুটবলটা এর চেয়েও বেশি কিছু।’ না চাইতে সেটিই যেন দেখিয়ে দিলেন এরিকসেন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply