আসামের মুসলিমদের নিয়ে ‘সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক’ মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন ভারতের সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত। প্রশ্ন ওঠেছে, সেনাপ্রধানের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় এমন মন্তব্য করার এখতিয়ার তার আছে কিনা তা নিয়েও।
বুধবার একটি সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিপিন রাওয়াত বলেন, “অাসামে একটি রাজনৈতিক দল রয়েছে নাম এআইইউডিএফ (অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট)। যদি তাদের উত্থান লক্ষ করেন তা হলে দেখবেন, বিজেপির থেকে দ্রুত গতিতে নিজের প্রভাব বিস্তার করেছে তারা।”
আসাম এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের মুসলিমদের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে দেখা হয় বদরুদ্দিন অজমলের দল এআইইউডিএফ’কে। বিগত বছরগুলিতে ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপি ও তাদের সহযোগী উগ্রপন্থি সংগঠনগুলোইর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সাম্প্রদায়িকতার মধ্যে আজমলের দল ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এমন অবস্থায় বিপিন রাওয়াতের মন্তব্যকে একই সাথে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক বলেও মনে করা হচ্ছে।
অাসামের মুসলিমপ্রধান জেলাগুলির ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে রাওয়াত বলেন, বাংলাদেশ থেকে আসা ‘বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের’ জন্যই পালটে যাচ্ছে রাজ্যের জনসংখ্যার চিত্র। অবশ্য এই অনুপ্রবেশকারীদের রাজ্যে ঢোকানোর পেছনে পাকিস্তান এবং চিনেরই হাত দেখেছেন রাওয়াত।
তার কথায়, “খুব পরিকল্পনামাফিক ভাবেই অনুপ্রবেশকারীদের দেশে ঢোকানো হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে এটা আমাদের পশ্চিমের প্রতিবেশির (পাকিস্তান) একটা ‘বদলি যুদ্ধ’ (প্রক্সি ওয়ার)। তাকে সাহায্য করছে আমাদের উত্তরের প্রতিবেশি (চীন)।” অাসামে ‘ভালো মানুষ’ এবং ‘সমস্যা সৃষ্টিকারী মানুষের’ মধ্যে বিভাজন করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন রাওয়াত।
রাওয়াতের এই মন্তব্যের পরেই তীব্র বিতর্ক শুরু হয়। সেনাপ্রধান হয়ে এ রকম ভাবে রাজনৈতিক মন্তব্য করা কখনোই উচিত হয়নি বলে বিভিন্ন মহল থেকে তার সমালোচনা করা হয়। এআইইউডিএফ এর প্রধান বদরুদ্দিন আজমল বলেন, দায়িত্বশীল একজন সেনা কর্মকর্তার এমন মন্তব্যে তিনি বিস্মিত।
টুইটারে তিনি বলেছেন, “জেনারেল রাওয়াত রাজনৈতিক মন্তব্য করেছেন। এটা খুব আশ্চর্যজনক! আমাদের দল গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী। আমরা যদি বিজেপির থেকে দ্রুত হারে বাড়ি তাতে ওঁর সমস্যা কোথায়। বড়ো দলগুলি ব্যর্থ হয় বলেই তো এআইইউডিএফ এবং আপের মতো দলগুলি তৈরি হয়।”
আজমল এও বলেছেন যে, তার দল শুধু মুসলমিদের প্রতিনিধিত্ব করে না, বরং এ অঞ্চলের ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার নিয়ে কথা বলে।
বিতর্ক শুরুর পর মুখরক্ষায় ভারতের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বিবৃতি দেয়া হয়েছে। বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, “সেনাপ্রধানের এই মন্তব্য কোনো মতেই রাজনৈতিক এবং সাম্প্রদায়িক নয়। শুধুমাত্র উন্নয়নের স্বার্থেই এই মন্তব্য করেছেন তিনি।”
প্রসঙ্গত, ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপিসহ উগ্র ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো আসামের মুসলমানদের সিংহভাগকে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ বলে প্রচারণা চালায়। তাদের দাবি অনুযায়ী, রাজ্যটির প্রায় এক কোটি মুসলমানের অর্ধেকের বেশি বাংলাদেশ থেকে গিয়ে বসত গেড়েছেন। যদিও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে এ দাবি নাকচ করা হয়েছে।
Leave a reply