মার্কিন সেনা প্রত্যাহার কার্যক্রম শেষ না হতেই আফগানিস্তানে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে তালেবান। দেশটির অর্ধশতাধিক জেলা এখন সশস্ত্র সংগঠনটির নিয়ন্ত্রণে। মঙ্গলবার কয়েক ঘণ্টার লড়াইয়ে আফগান-তাজিকিস্তান সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিং দখলে নেয় তারা।
প্রতিদিনই তালেবানের নতুন নতুন তৎপরতার খবর আসছে আফগানিস্তানে। মে মাসে পশ্চিমা সেনাবহর প্রত্যাহার শুরু হওয়ার পর, নিজেদের সক্ষমতার জানান দিচ্ছে সশস্ত্র সংগঠনটি। যার ভয়াবহ একটি রূপ দেখা গেলো মঙ্গলবার। মাত্র এক ঘণ্টার লড়াইয়ে তাজিকিস্তান সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিং ‘শির খান’ নিয়ন্ত্রণে নেয় তালেবান যোদ্ধারা। এসময় প্রাণ বাঁচাতে অনেক নিরাপত্তা সদস্য পালিয়ে যান প্রতিবেশী-তাজিকিস্তানে। গুরুত্বপূর্ণ অনেক এলাকাতে প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ হারানোয় উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ।
আফগানিস্তানে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ডেবোরাহ লিওনস বলছেন, মে মাস থেকে আফগানিস্তানের ৩৭০ জেলার মধ্য অর্ধ-শতাধিকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান। তারা প্রাদেশিক রাজধানীগুলোর চারপাশে ঘাঁটি গেড়েছে। যখনই বিদেশি সেনাবহর পুরোপুরি সরবে তারা সেগুলো দখলে নিয়ে নেবে। তালেবান এমন অপতৎপরতা চালাতে থাকলে; আবারও সৃষ্টি হবে দীর্ঘমেয়াদী সহিংসতার।
এ বছর সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব সেনা ফেরাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে তালেবানের হুমকি ঠেকাতে, আন্তর্জাতিক জোটের সহায়তা অব্যাহত রাখার অনুরোধ আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। অবশ্য-মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনের স্পষ্ট বিবৃতি, কোনোভাবেই বাতিল হবে না সেনা প্রত্যাহারের সময়সূচি ও পরিকল্পনা।
আর পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি জানান, তালেবানের তৎপরতা যতোই বাড়ুক না কেন, দুটি বিষয় অপরিবর্তিত থাকবে। প্রথমত, কূটনৈতিক সুরক্ষায় নিয়োজিত সেনারা ছাড়া; বাদবাকি মার্কিনীদের প্রত্যাহার করবে যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয়ত, চিফ অব কমান্ডারের নির্দেশনা অনুসারে, সেপ্টেম্বরেই শেষ হবে প্রক্রিয়াটি।
আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হানিফ আতমার জানান, দু’দশক ধরে আফগান এবং আন্তর্জাতিক বাহিনী যে বলিদান দিলো; সেটার নিষ্ফল পরিণাম কাম্য নয়। গত ২০ বছরে যেভাবে ত্যাগ স্বীকার এবং সহযোগিতা দিয়ে এসেছে আন্তর্জাতিক বাহিনী, ভবিষ্যতেও তাদের সেভাবেই পাশে চায় আফগানরা।
জঙ্গি দমনে ২০০১ সালে আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সেনাবহর। দু’দশক পরও এ অভিযানের সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন আছে বিশ্বজুড়ে। উল্টো এমন সময়ে মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তান ছাড়ছে, যখন তালেবান আগের চেয়েও শক্তিশালী। এমনকি, আলোচনার টেবিলে ডেকে তালেবানকে কূটনৈতিক বৈধতা দেয়ারও অভিযোগ আছে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে।
Leave a reply