পটুয়াখালী প্রতিনিধি:
ছেলে-মেয়ের বিয়ে নিয়ে দুই পরিবারের কলহের সমাধানে সালিশে ডেকে বাল্য বিবাহ করলেন সালিশ ডাকা ইউপি চেয়ারম্যান। এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন তুমুল আলোচনা। প্রেমের সম্পর্কের নিষ্পত্তি করতে সালিশ ডেকেছিলেন পটুয়াখালীর বাউফলের সেই ইউপি চেয়ারম্যান। কিন্তু সমস্যার সমাধান না করে সেই কনেকে নিজেই বিয়ে করলেন তিনি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে এটি সেই চেয়ারম্যানের দ্বিতীয় বিয়ে।
স্কুল ছাত্রীর সাথে যুবকের প্রেমের সম্পর্কের নিষ্পত্তিতে ডেকে গত শুক্রবার (২৫ জুন) ওই ছাত্রীর সঙ্গে বিয়ের পিরিতে বসলেন ইউপি চেয়ারম্যান। ঘটনাটি এলাকায় বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলে স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বসহ দেখতে শুরু করেছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কনকদিয়া ইউনিয়নের নারায়ণপাশা গ্রামের হাফেজ মোঃ রমজান আলী (২৫) নামের এক যুবকের সাথে একই ইউনিয়নের নাজনিন আক্তারের (১৪) প্রেমের সম্পর্ক ছিল দীর্ঘদিন ধরে। নাজনিন কনকদিয়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেনীর ছাত্রী। কিন্তু তাদের এ সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি নাজনিনের বাবা নজরুল ইসলাম। তারা দুইজন গত তিনদিন আগে বাসা থেকে পালিয়ে গেলে নাজনিনের বাবা তাদেরকে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে আসে এবং বিষয়টি সমাধানের জন্য কনকদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারকে জানান।
চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার শুক্রবার (২৫ জুন) ইউনিয়ন পরিষদে সালিশ বৈঠক ডাকেন। ওই বৈঠকে রমজান ও নাজনিন সহ দুই পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে রমজান কেন নাজনিনকে নিয়ে পালিয়ে গেছিল তার কোন সদুত্তর দিতে পারেনি এবং বৈঠকে নাজনিনকে দেখে পছন্দ হয়ে যাওয়ায় নাজনিনের বাবার কাছে নিজের বিয়ের প্রস্তাব দেন চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার। মেয়ের বাবা এ বিয়েতে সম্মতি প্রকাশ করলে ওই দিন বাদ জুমা চেয়ারম্যানের আয়লা বাজারের বাসায় কাজী ডেকে এনে ৫ লাখ টাকা কাবিনে নাজনিনকে বিয়ে করেন শাহিন হাওলাদার।
তবে শালিস বৈঠকের কথা অস্বীকার করে চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার মুঠোফোনে জানান, দীর্ঘদিন ধরে নাজনিনের সাথে সম্পর্ক ছিল বিষয়টি পারিবারিক ভাবে জানা ছিল সকলের। আমার বিয়ের প্রয়োজন থাকায় আমি সবাইকে অবগত করেছি। এক পর্যায়ে গত ২১ তারিখ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ওইদিন রাতেই আমাদের ৫ লাখ টাকায় কাবিন হয়।
পরে পারিবারিক ভাবে গত শুক্রবার জুমা নামাজ বাদ কলমা ও দোয়া মোনাজাত হয় এবং পরে নাজনিনকে আমার ঘরে নিয়ে আসি। শাহিন হাওলাদার জানান, এসময় উভয় পক্ষের লোকজন উপস্থিত ছিল। তবে কনকদিয়া ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানীয় কোন কাজী তার বিবাহ সম্পন্ন করেছেন তার নাম বলতে পারেননি চেয়ারম্যান। এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন এই মুহুর্তে তার নাম স্মরণ নাই। তবে তার নিকটাত্মীয় হাফেজ মোঃ আবু সাদেক বিয়ের সময় দোয়া ও মিলাদ পড়িয়েছেন বলে জানান শাহিন হাওলাদার।
বিস্তারিত জানতে চাইলে আবু সাদেক বলেন, কাবিন ও বিয়ে শুক্রবারই করানো হয়েছে। কিন্ত চেয়ারম্যান শাহিন যে বলছেন গত ২১ তারিখ কাবিন হয়েছে সে প্রসঙ্গে সাদেক জানান, সেটা তিনিই (চেয়ারম্যান) ভাল জানেন। আমি শুক্রবার তাদের পাঁচ লাখ কাবিন করিয়েছি আমার কাছে কাগজসহ প্রমাণ আছে। সেখানে মেয়ের বাবা, চাচা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি বর্গরা উপস্থিত ছিল।
মেয়ে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে এটা তো বাল্য বিয়ের আওতার মধ্যে, এটা যাচাই করা উচিত ছিলনা? এমন প্রশ্নের জবাবে সাদেক হোসেন জানান, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যে জন্ম সনদ দাখিল করা হয়েছে তাতে তার বয়স ১৮ পূর্ণ হয়েছে দেখেই আমরা কাবিন করিয়েছি। তাছাড়া যেখানে মেয়ে ও মেয়ের বাবা চাচাসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকায় আমরা আর কিছু যাচাই করিনি।
একই প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার জানান, নাজনিন তিন বছর আগে নবম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। বর্তমানে সে লেখাপড়া করেনা। জন্ম সনদ অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১১ এপ্রিল ২০০৩ইং।
তবে এ দাবী অস্বীকার করে কনকদিয়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরিমল চন্দ্র জানান, নাজনিন আক্তার তার প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে অষ্টম শ্রেণীর নিয়মিত শিক্ষার্থী। শুক্রবার চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের সাথে তার ওই শিক্ষার্থীর বিয়ে সম্পন্নের ঘটনা কিছুক্ষণ আগে লোকমুখে শুনেছেন এবং তিনি অবাক হয়েছেন।
বাউফল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল মামুন জানান, লোকমুখে ঘটনা শুনেছি তবে মেয়ের পক্ষ থেকে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। যদি বাল্য বিয়ের অভিযোগ পাওয়া যায় তবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাকির হোসেন জানান, মেয়ের বয়স নির্ধারণ নিয়ে ইতিমধ্যে যাচাই বাচাই শুরু করছি। তার জন্ম সনদ এবং স্কুলের সার্টিফিকেট সবকিছু আমরা সংগ্রহ করছি। ঘটনার আগ থেকেই চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের প্রথম স্ত্রী পটুয়াখালী অবস্থান করছেন তবে এ ব্যাপারে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার পটুয়াখালীর বাউফলের কনকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মত আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হয়ে নৌকা মার্কা নিয়ে মোঃ শাহিন হাওলাদার (৬০) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিক এভাবে প্রেমিকা হারানো সহ্য করতে না পেরে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখন চিকিৎসাধীন হাফেজ মোঃ রমজান আলী। তিনি জাকেয়াবাদ দাখিল মাদ্রাসা সংলগ্ন একটি মসজিদের ইমাম হিসাবে কর্মরত।
Leave a reply