১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক কথা বলেছেন যমুনা টেলিভিশনের সাথে। সেখানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণালী ইতিহাস নিয়ে স্মৃতিচারণ ও ভবিষ্যৎ নিয়ে তার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র, শিক্ষক, সংশ্লিষ্ট কলাকুশলী সহ সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে সাবেক উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আসলে স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ বপন করা হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন যেসব আন্দোলন করেছেন তার প্রত্যেকটিতেই ফুটে উঠেছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর এক অদম্য মানসিকতা। এ মানসিকতার কারণেই বিভিন্ন জাতীয় আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় অগ্রগণ্য।
বৈষম্য ও অন্যায়ের প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু যে আন্দোলন শুরু করলেন তার ফলশ্রুতিতে আরম্ভ হয়েছিলো বাংলাদেশের জন্ম সংগ্রাম। বাঙালির মুক্তি আন্দোলনে প্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্বাগ্রে যে প্রতিষ্ঠানের নাম আসে সেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই রুখে দাঁড়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এখানকার অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী শহীদ হয়েছেন হানাদারদের আক্রমণে।
ড. আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবসময়ই ঋণী। কারণ, এই বিশ্ববিদ্যালয়টি সূচনালগ্ন থেকে পরিচালিত হয়েছে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের কঠোর পরিশ্রমের টাকায়। পূর্ব বাংলার পশ্চাৎপদ সমাজে মধ্যবিত্ত শ্রেণির আবির্ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা সবসময়ই অগ্রগণ্য। ন্যায্য অধিকার আদায় বা যেকোনো রাজনৈতিক বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে সবসময়ই সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অত্র অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলার জনজীবনে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখানে দেশের প্রত্যন্ত জায়গা থেকে উঠে আসা ছাত্রও দেশের শীর্ষস্থানীয় চাকুরে, আমলা বা রাজনীতিবিদ হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান নানা সমস্যার সমাধান বিষয়ে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বড় প্রতিষ্ঠান, এখানে কিছু সমস্যা থাকা খুবই স্বাভাবিক। তবে এসব সমস্যার সমাধান করতে হলে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। গবেষণা মান বৃদ্ধি তখনই সম্ভব যখন আমরা গবেষণার মান নিয়ে কোনো কম্প্রোমাইজ করবোনা, কমপক্ষে নিজেদের কাজে আমরা যেন সৎ থাকি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত ও বিশ্বমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। সে উদ্দেশ্যে তিনি অত্যন্ত সময়োপযোগী কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তার অনুপস্থিতিতে সে ধারা বন্ধ হয়ে যায়।
আমরা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আরও ভালো করতে চাই বলেই এমন অনেক নতুন বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে খোলা হয়েছে যেগুলোর চাহিদা এখন বিশ্বব্যাপী। আশা করি আমাদের শিক্ষার্থীরা এসব বিষয়ে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের সম্মান বৃদ্ধি করবে। যে বুদ্ধিবৃত্তিক অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে বাঙালী জাতি যাচ্ছে তা থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় আমাদের নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি।
Leave a reply