ফরিদপুর প্রতিনিধি:
করোনা চিকিৎসার দায়িত্বে নিয়োজিত গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসকদের প্রেষণে বদলি করার কারণে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে ফরিদপুর করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে। এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, বিএমএ ও জেলা করোনা নিয়ন্ত্রণ কমিটি।
সোমবার (৫জুলাই) বিকেলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে রাষ্ট্রপতির পক্ষে উপ-সচিব জাকিয়া সুলতানা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বদলির আদেশ দেয়া হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে কর্মরত ৬৩জন শিক্ষককে প্রেষণে বদলি করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৭ জনকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে, ১৬ জনকে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে এবং ২০ জনকে ফরিদপুর করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে।
যে ২৭ জনকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে তাদের মধ্যে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড ও আইসিইউতে কর্মরত গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন চিকিৎসক রয়েছেন।
তারা হলেন সহকারী অধ্যাপক পর্যায়ে অনন্ত কুমার বিশ্বাস, খান মো. আরিফ, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, কামালউদ্দিন আহমেদ, আবু ফয়সাল মো. পারভেজ, মাকসুদা খাতুন, মো. মুজাহিদুল ইসলাম এবং প্রভাষক পর্যায়ে মেহেদী মাসুদ, সামিউল ইসলাম, অঞ্জন কুমার দাস, সিদ্ধার্থ শঙ্কর অন্যতম।
এবিষয়ে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. আসাদউল্লাহ বলেন, যাদের শরীয়তপুর বদলি করা হয়েছে তাদের অনেকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড ও আইসিইউ এর সাথে যুক্ত। এর মধ্যে আইসিইউএর প্রধান অনন্ত কুমার বিশ্বাসও রয়েছেন। অন্য চিকিৎসকরা করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসারত রোগীদের দেখাশোনা করেন।
মো. আসাদউল্লাহ আরও বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ওই চিকিৎসকরা চলে গেলে ফরিদপুরে করোনা রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত হবে। এ হাসপাতালে শুধু ফরিদপুর নয় আশেপাশের রাজবাড়ী, মাগুরা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, ঝিনাইদহ জেলার রোগীরাও চিকিৎসা নিতে আসেন। এ বদলি কার্যকর করা হলে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হবে। তাছাড়া সম্প্রতি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালকে ২৫০ শয্যা থেকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় যেখানে চিকিৎসক প্রয়োজন সেখানে দায়িত্বশীল চিকিৎসকদের সরিয়ে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই।
ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, এ আদেশ পুণঃবিবেচনার জন্য গত সোমবারই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত অনুরোধ জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের আরও নতুন চিকিৎসক প্রয়োজন। সম্প্রতি ১২৫জন চিকিৎসক চেয়ে একটি আবেদনও করা হয়েছে।
ফরিদপুর বিএমএ সভাপতি আ স ম জাহাঙ্গীর চৌধুরী বলেন, এ সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। করোনা রোগীদের জন্য ৫০০ শয্যা করা হলে আরও চিকিৎসক প্রয়োজন। সাধারণ রোগীর ক্ষেত্রে যে চিকিৎসক প্রয়োজন করোনা রোগীর ক্ষেত্রে তার দ্বিগুণ চিকিৎসক প্রয়োজন হয়। এমন অবস্থায় চিকিৎসকদের বদলির এ সিদ্ধান্ত অবশ্যই পুনঃবিবেচনা করতে হবে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক অতুল সরকার বলেন, প্রেষণে বদলি করা ওই চিকিৎসকদের গুরুত্ব তুলে ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি এ সিদ্ধান্ত রদ করা হবে। আমরা সে সিদ্ধান্ত শোনার প্রতীক্ষায় আছি।
Leave a reply