ভারতীয় সিনেমার সুপার স্টার শ্রীদেবীর মৃত্যুকে ঘিরে সৃষ্ট সব রকম জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটেছে বলেই সবাই ভেবেছিল। কিন্তু শেষ হয়েও হচ্ছে না শেষ!
প্রাথমিকভাবে মৃত্যুর কারণ হিসেবে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা বলা হলেও ময়না তদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ভিন্ন কথা!
সোমবার দুবাই পুলিশের দেওয়া ময়না তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাননি শ্রীদেবী। তিনি মাথা ঘুরে বাথটাবে পড়ে যান, বাথটাবের পানিতে ডুবে তার মৃত্যু ঘটেছে।
ময়না তদন্তের এই প্রতিবেদন পাওয়ার পর ধরে নেওয়া হয়েছিল, যাক শেষ পর্যন্ত সৃষ্ট রহস্যের একটা কূল-কিনারা পাওয়া গেল। বিধিবাম দুবাই পুলিশ এখানে থামতে নারাজ। তারা বিষয়টিকে বেশ গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে।
শ্রীদেবীর মৃত্যুর ‘রহস্য’ সমাধানে রীতিমতো মাঠে নেমেছে দুবাই পুলিশের চৌকস তদন্ত দল। সোমবার রাতে সকল আইনি প্রক্রিয়া শেষে নিজ ভূমে স্বামী বনি কাপুরের নিকট আত্মীয় অনিল আম্বানির নিজস্ব বিমানে শ্রীদেবীর মরদেহ ফেরত আসার কথা ছিল। তদন্তের ঘন ঘটায় সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় তা শেষ পর্যন্ত হয়নি।
টাইস অব ইন্ডিয়া আজ মঙ্গলবার জানিয়েছে, গত দিন শ্রীদেবীর স্বামী বনি কাপুর, এবং হোটেল কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
দুবাই পুলিশ জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করে আজ শ্রীদেবীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া ছাড়পত্র দেওয়া হবে। অপর কোনো কোনো সূত্র জানাচ্ছে, ‘ময়না তদন্ত প্রতিবেদন কিছু প্রশ্নকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। ওসব প্রশ্নের উত্তর মেলাতে কেউ কেউ নাকি পুনরায় ময়না তদন্ত দাবি করছেন। এ জন্য নাকি আবার পুনরায় ময়না তদন্ত করা হতে পারে। তবে নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র এখনও বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
দুবাইয়ের আইন অনুসারে, কেউ হোটেলে মারা গেলে তার ময়না তদন্ত করতে হয়। সে জন্য শ্রীদেবীর ময়না তদন্ত করা হয়েছে। ময়না তদন্তে দূর্ঘটনা জনিত মৃত্যু বলা হলেও মামলা দায়ের করেছে দুবাই পুলিশ।
ভারতী বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, প্রয়োজন হলে আবারও শ্রীদেবীর মরদেহের ময়না তদন্ত করা করতে পারে দুবাই পুলিশ প্রসিকিউশন (ডিপিপি)। মৃতার ফোনকলের সব তথ্য যাচাই করে দেখা হচ্ছে।
সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, কখন কী ধরনের চিকিৎসাসেবা এর আগে শ্রীদেবী নিয়েছেন, এবং কোন ধরনের অস্ত্রোপচারের করিয়েছেন। এ সব তথ্য জানতে ভারত থেকে শ্রীদেবীর চিকিৎসা বিষয়ক যাবতীয় তথ্য চেয়েছে ডিপিপি। কেননা, পূর্ববর্তী কোনো চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে হঠাৎ মৃত্যু ঘটনা একেবারে বাতিল করে দেওয়া যায় না।
পাশাপাশি বনি কাপুরকে ডিপিপির অনুমতি ছাড়া দুবাই ছাড়তে বারণ করা হয়েছে বলেও ভারতের সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
এদিকে বলিউড মহাতারকার মরদেহ এখনও আল কিউসে হাসপাতালের লাশ ঘরে রয়েছে। হোটেলে তিনি যে কক্ষে ছিলেন, সে কক্ষটি সিলগালা করে রেখেছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, স্বামী বনি কাপুর ও মেয়ে খুশিকে সঙ্গে নিয়ে শ্রদেবী দুবাই গিয়েছিলেন ননদের ছেলে মোহিত মারওয়ারের বিয়ের আমন্ত্রণে। অনুষ্ঠান শেষে মেয়ে নিয়ে বনি মুম্বাই ফিরলেও শ্রীদেবী ছিলেন জুমেইরাহ ইমিরেটস হোটেলে।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম সূত্র অনুসারে, মনমোহন শেঠির জন্মদিনের পার্টিতে যোগ দিতে মুম্বাই আসেন স্বামী বনি কাপুর। এরপর শ্রীদেবীকে চমকে দিতে শনিবার তিনি (স্বামী বনি কাপুর) দুবাই ফেরেন।
সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, বনি কাপুর শনিবার বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে দুবাই ফিরে শ্রীদেবীকে ঘুম থেকে জাগিয়ে ডিনারে আমন্ত্রণ জানান। তারা ১৫ মিনিট আলাপ করেন। এরপর শ্রী ওয়াশরুমে যান। ১৫ মিনিট পার হয়ে গেলেও শ্রীদেবীর সাড়া না পেয়ে উদ্বিগ্ন বনি দরজায় আওয়াজ দেন। এতেও কোনো সাড়া না পেয়ে তিনি জোর করে দরজা খুলে ওয়াশরুমে ঢোকেন, এবং তাকে (শ্রীদেবী) নিথর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।
এদিকে শ্রীদেবীর দেশে ফেরা নিয়ে বাড়ি সাজাতে সবাই ভীষণ ব্যস্ত। সিনেমা জগতের এই মহাতারকার পছন্দের রঙ সাদা। তার অন্তিম ইচ্ছা অনুসারে, ভারসোভায় তার বাংলো বাড়ি থেকে শুরু করে সবকিছু সাদা রঙের গোলাপ, অর্কিড, লিলিতে সাজানো হচ্ছে।
শ্রীদেবীর মরদেহ দেশে ফেরা নিয়ে সৃষ্ট অনিশ্চতায় শেষকৃত্য কখন অনুষ্ঠিত হবে, এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো সূচি পাওয়া যায়নি।
যমুনা অনলাইন: এফএইচ
Leave a reply