স্টাফ রিপোর্টার, মাদারীপুর:
মাদারীপুরে কিছুতেই থামছে না মানবপাচার। এবার অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে হিটস্ট্রোকে মাদারীপুরের হৃদয় কাজী (২২) নামের এক যুবক মারা গেছে। এ সময় গুরুতর অসুস্থ হয়েছে আরও ১০ জন। লিবিয়ার নৌ পুলিশ তাদের উদ্ধার করে ওই দেশের একটি হাসপাতালে ভর্তি করেছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীদের পরিবার। ওই নৌকায় কতজন অভিবাসন প্রত্যাশী ছিল তা জানা যায়নি।
মৃত হৃদয় কাজী রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট ঘোসালকান্দি গ্রামের মোশারফ কাজীর ছেলে। এ ঘটনায় দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন ভুক্তভোগীদের স্বজন ও এলাকাবাসী। দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।
স্বজনরা জানান, তিন মাস আগে দালালদের খপ্পড়ে পড়ে রাজৈর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের টেকেরহাট ঘোষালকান্দি এলাকার মোশারফ কাজীর ছেলে হৃদয় লিবিয়ায় যায়। সেখানে দীর্ঘদিন তাকে আটকে নির্যাতন চালায় দালালচক্র। পরে গত ১৯ জুলাই লিবিয়া থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় অন্যান্য অভিবাসন প্রত্যাশীদের সাথে দালালরা ইতালির উদ্দেশ্যে তাকেও ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে বাধ্য করে। পরে ভূমধ্যসাগরের মাঝামাঝি গেলে নৌকাটির ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে সাগরে ভাসতে থাকে। এ সময় প্রচন্ড রোদের তাপ ও গরমের কারণে হিটস্ট্রোকে প্রাণ হারায় হৃদয় কাজী।
একই নৌকায় থাকা হৃদয় কাজীর বন্ধু হৃদয় শেখ জানায়, হৃদয় আমার কোলেই পানি পানি করতে করতে মারা গিয়েছে। আমিও অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন আছি। এছাড়াও একই উপজেলার ছাতিয়ানবাড়ী গ্রামের সাধন বিশ্বাস, হোসেনপুর এলাকার জিন্নাত শেখ, শংকরদী গ্রামের সাগর সিকদারসহ ১০ জন
চিকিৎসাধীন রয়েছে।
নিহত হৃদয় কাজীর মা কোমেলা বেগম বলেন, আমার ছেলে হৃদয় কাজীর সাথে সর্বশেষ আমার সাথে গত ১৭ জুলাই ফোনে কথা হয়েছে । তখন আমার ছেলে কেঁদে কেঁদে আমাকে বার বার বলছিল মা আমাকে দালালরা মারধর করে। ঠিকমত খাবার দেয় না।
ভুক্তভোগীদের পরিবার ও এলাকাবাসী জানায়, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বড়দিয়া গ্রামের মানব পাচারচক্রের সদস্য আক্কাস ফকিরের ছেলে ইলিয়াছ ফকির ও টুটুল ফকির ইতালি নেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে হৃদয়ের পরিবারের কাছ থেকে দুই দফায় ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা আদায় করে। ধার-দেনা করে এই টাকা জোগাড় করে দিলেও শেষ রক্ষা হয়নি হৃদয়ের। এ ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
হৃদয়ের সাথে থাকা রাজৈর উপজেলার অসুস্থ ১০ যুবক গুরুতর অবস্থায় লিবিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাদের ফিরে পেতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন অসহায় পরিবারগুলো।
এ ব্যাপারে রাজৈর থানার ওসি (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ পরিবার থেকে অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
Leave a reply