শুরু হলো উত্তাল মার্চ। সংগ্রাম শুরুর এই মাসটি ছিলো উত্তেজনায় ভরপুর। পাকিস্তান ছিল কাগজে-কলমে। সবকিছুই চলছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিলেন। যার ধারাবাহিকতায় পাক হানাদাররা বাঙালির চালায় উপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। ২৫ মার্চ রাতে সংঘটিত হয় ইতিহাসের বর্বরোচিত গণহত্যা।
মূলত, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটে স্বতন্ত্র বাঙালি জাতিসত্তার। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর সাথে বিরোধের জায়গাটাও হয় স্পষ্ট। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট সরকার, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৯’র গণঅভ্যুত্থানের মতো ধাপগুলো পেরিয়ে আসে ১৯৭০’র নির্বাচন। যেখানে জনগণের একচেটিয়া ভোট পায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। নিয়ম অনুযায়ী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। কিন্তু ইয়াহিয়া সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরে শুরু করে টালবাহানা। ৩ মার্চ অধিবেশনের নির্ধারিত তারিখ ছিল কিন্তু ১ মার্চ দুপুরে বেতার ঘোষণায় হঠাৎ জানানো হয় জাতীয় অধিবেশন স্থগিত। মুহূর্তেই বদলে যায় ঢাকা।
১৯৭১ সালে ডাকসুর ভিপি ছিলেন আ স ম আব্দুর রব। তিনি জানালেন, দুপুরে জাতীয় অধিবেশ স্থগিতের খবর পাওয়া গেল। তখনই আমরা মিছিল শুরু করলাম। আমি শুরু করলাম জগন্নাথ কলেজ থেকে। মাখন শুরু করলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কলাভবন থেকে।
তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, যখন ক্ষমতা হস্তান্তর হলো না, আমরা রাজপথে নেমে এলাম। পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে দিলাম।
উত্তাল মার্চের স্মৃতিচারণ করে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, আমরা সবাই বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠস্বর হয়ে গেলাম। তার চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে পথ চলতে থাকলাম। মানুষের কাছে খ্যাতি পেলাম ‘চার খলিফা’ হিসেবে।
অধিবেশনের স্থগিতের খবর যখন আসলো হোটেল পূর্বাণীতে তখন বঙ্গবন্ধুর সংবাদ সম্মেলন চলছিল। সেখান থেকেই ৫ দিনের জন্য হরতাল ও অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেন বাঙালির কণ্ঠস্বর। অকেজো হয় ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র পাকিস্তানের ভিত। সেদিন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে শুধুমাত্র ছাত্রলীগের নেতৃত্বে গঠিত হয় স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। আন্দোলনের গতিপথ নির্ধারণ করা হয়।
কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক জানালেন, আমাদের ধারণা ছিল তারা এ ষড়যন্ত্রটি করতে পারে। এবং আমাদের সংগঠিতভাবে শাসকগোষ্ঠীর মোকাবেলা করতে হবে।
এর পরের ঘটনাপ্রবাহ প্রতিরোধের ইতিহাস।‘পাকিস্তান’ নাটকের শেষ দৃশ্যটি মঞ্চে উপস্থাপিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানকে অতীত বানিয়ে রব ওঠে ‘জয় বাংলা’। সবটুকু দৃঢ়তা নিয়ে উড়তে শুরু করে মানচিত্র খচিত লাল-সবুজ পতাকা।
যমুনা অনলাইন: টিএফ
Leave a reply