ঐতিহাসিক আয়া সোফিয়া মসজিদ ইস্যুতে ইউনেস্কোর সমালোচনার কড়া জবাব দিয়েছে তুরস্ক। ঐতিহাসিক আয়া সোফিয়া মসজিদ নিয়ে ইউনেস্কোর অবস্থান সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক ও পক্ষপাতমূলক বলে অভিযোগ তুরস্কের। তুরস্কের পদক্ষেপে সংস্থাটির এমন মনোভাবে বিস্মিত তুরস্ক।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) আয়া সোফিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করায় এমন মনোভাব ব্যক্ত করে তুরস্ক। এদিকে চীনে চলমান বার্ষিক বৈঠকে তুরস্কের কাছে আয়া সোফিয়ার রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত রিপোর্ট চেয়েছে ইউনেস্কো।
সম্প্রতি নিজেদের ওয়েবসাইটে ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক অঞ্চল শিরোনামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে ইউনেস্কো। সেখানেই তারা আয়া সোফিয়া নিয়ে তাদের গভীর চিন্তার কথা জানিয়েছে। কিন্তু তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, আয়া সোফিয়া নিয়ে ইউনেস্কো যে ভাষা ব্যবহার করেছে তা মেনে নেয়া যায় না। তাদের এই নিবন্ধ সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, মসজিদে রূপান্তরিত করা হলেও এই ঐতিহাসিক ভবনের নকশায় কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। এই সিদ্ধান্তের কোনো নেতিবাচক প্রভাব আয়া সোফিয়ার ওপর পড়েনি।
তুরস্ক সরকারের একজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জাতিসংঘের বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় থাকা ঐতিহাসিক ভবনের সংরক্ষণ, দায়িত্ব, অধিকার ও ক্ষমতা সম্পর্কে তারা সচেতন।
প্রেসিডেন্ট এরদোগানও গত শনিবার (২৪ জুলাই) এক টুইট বার্তায় বলেন, তুরস্কে সভ্যতার আবার সূর্যোদয় হচ্ছে, আয়া সোফিয়া তারই প্রমাণ। আমি আশা করি বিশ্বের শেষদিন পর্যন্ত এর অন্দরে মুসলিমদের প্রার্থনা অনুরণিত হবে।
ইউনেস্কোর কমিটি জানিয়েছে, তাদের কাছে বেশি তথ্য নেই, তাই তারা এ সংক্রান্ত কোনো আলোচনা করতে পারেনি তারা। তাই ইউনেস্কো এই বিষয়ে তুরস্কের পরিকল্পনা জানতে চেয়েছে এবং তারা চায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এটা নিয়ে আলোচনা হোক।
উল্লেখ্য যে, ঐতিহাসিক আয়া সোফিয়া নির্মিত হয় বাইজান্টাইন আমলে। মুসলমানরা ইস্তাম্বুল জয় করার পূর্বে এটি ৯১৬ বছর ধরে খ্রিস্টানদের গির্জা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এরপর স্থাপত্যটি ১৪৫৩ সাল থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫০০ বছর মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯৩৪ সালে বাইজেন্টাইন সম্রাজ্য পতনের পর মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক একটি ডিক্রি জারি করে আয়া সোফিয়াকে জাদুঘরে পরিণত করেন। গত ৮৬ বছর যাবত এটি জাদুঘর হিসেবেই ব্যবহৃত হত। ২০২০ সালের ১০ জুলাই তুরস্কের সর্বোচ্চ আদালত কামাল পাশা স্বাক্ষরিত ওই ডিক্রি বাতিল করেন। এরপর প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান স্থাপনাটি মসজিদে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেন।
গত বছরের মে মাসে ইস্তাম্বুল বিজয়ের বর্ষপূর্তিতে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান আয়া সোফিয়াতে নামাজ আদায় করেন। এরপর থেকে ঐতিহাসিক মসজিদটিতে এক বছরে ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ ভ্রমণ করেছে।
Leave a reply