ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের সাম্প্রতিক এক জরিপ বলছে, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সড়ক ব্যবস্থা সবচেয়ে খারাপ যেসব দেশের তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। বাংলাদেশের নিচে অবস্থান করা এশিয়ার একমাত্র দেশটি নেপাল। ওই দেশের সড়ক নির্মাণের অপর্যাপ্ত কাঁচামাল এবং পাহাড়ি ভূ-প্রকৃতি উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা বলে বিবেচিত হয়।
গত বুধবার এ নিয়ে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। জরিপে দেখা যাচ্ছে, উন্নত সড়ক ব্যবস্থার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১১৩তম।
এশিয়ার মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করা দেশটি সিঙ্গাপুর। একইসঙ্গে বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে দেশটি। সড়কের অবকাঠামোগত দিক থেকে তারাই এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে।
এশিয়ার মধ্যে সিঙ্গাপুরের পরেই অবস্থান করছে জাপান ও তাইওয়ান। বিশ্বের তালিকায় দেশ দু’টির অবস্থান যথাক্রমে পঞ্চম ও ১১তম। এর পরে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া ও মালয়েশিয়া, এদের অবস্থান যথাক্রমে ১৪তম ও ২০তম।
উন্নত সড়ক ব্যবস্থার তালিকায় চীনের অবস্থান বিশ্বের মধ্যে ৩৯তম। দেশটিতে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে প্রশস্ত হাইওয়ে যার দৈর্ঘ্য ৮৫ হাজার কিলোমিটার। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলংকার অবস্থান সব থেকে ভালো। ভারতের সড়ক ব্যবস্থাও আগের থেকে উন্নত হচ্ছে। পাকিস্তান (৬০তম) ও থাইল্যান্ডের (৭৭তম) চেয়ে এগিয়ে আছে ভারত (৫১তম)।
তাছাড়া শত প্রতিকূলতা থাকার পরও ভুটানের অবস্থান ৮০তম, কম্বোডিয়া ৯৩তম এবং মঙ্গোলিয়া ১০৯তম। এদের থেকেও কয়েক ধাপ পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।
এবার দেখা যাক বিপরীত একটি চিত্র। বাংলাদেশের সড়ক ব্যবস্থা এত খারাপ হলেও এইসব সড়কের নির্মাণে কিন্তু কম টাকা খরচ করা হয়নি! বরং বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, বিগত বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সড়ক নির্মাণে সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে বাংলাদেশে।
গত বছরের জুন মাসে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে প্রতিবেশি ভারত ও চীনের তুলনায় অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করে বাংলাদেশ। এই বাড়তি খরচের জন্য উচ্চ মাত্রায় দুর্নীতি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়া ও দরপত্রে প্রতিযোগিতা না থাকাকে দায়ী করেছিল বিশ্বব্যাংক।
২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে ২০১৭ সালের ২০ জুন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। সেখানে বাংলাদেশের সাথে অন্যান্য দেশে অবকাঠামো নির্মাণ খরচের একটি আনুষ্ঠানিক চিত্র তুলে ধরে বৈশ্বিক ঋণদানকারী সংস্থাটি।
জানানো হয়, চার লেন সড়ক নির্মাণের মধ্যে রংপুর-হাটিকুমরুল মহাসড়কে সড়কের প্রতি কিলোমিটারের জন্য ৬৬ লাখ ডলার, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ৭০ লাখ ডলার, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে এক কোটি ১৯ লাখ ডলার, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ২৫ লাখ ডলার ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ২৫ লাখ ডলার খরচ নির্ধারিত হয়েছে।
অন্যদিকে চার লেন সড়ক তৈরিতে ভারতে ১১ লাখ থেকে ১৩ লাখ ডলার ও চীনে ১৩ লাখ থেকে ১৬ লাখ ডলার খরচ হয়। এই হিসাব অনুযায়ী ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার খরচ ভারতের কিছু সড়কের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি।
এছাড়া ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জেনেভায় ইউএন-ইসিই (ইকোনমিক কমিশন ফর ইউরোপ) আয়োজিত এক সেমিনারে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মহাসড়ক নির্মাণের তুলনামূলক ব্যয়ের চিত্র তুলে ধরেন গ্রিসের ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব এথেন্সের অধ্যাপক দিমিত্রিয়স স্যামবুলাস।
‘এস্টিমেটিং অ্যান্ড বেঞ্চমার্কিং ট্রান্সপোর্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার কস্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে তিনি জানান, চার লেনের নতুন মহাসড়ক নির্মাণে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে খরচ হয় গড়ে ৩৫ লাখ ডলার বা ২৮ কোটি টাকা। আর দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীত করতে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় ২৫ লাখ ডলার বা ২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চার লেনের সড়কের চেয়ে ইউরোপে চার লেনের সড়ক নির্মাণের খরচ অর্ধেক!
Leave a reply