ষাটের দশকের শেষ ভাগ, জহির রায়হান প্রযোজিত ‘সংসার’ সিনেমায় আবির্ভাব এক কিশোরীর। সেই কিশোরী তার অভিনয়, সৌন্দর্য আর নিজস্বতায় হয়ে ওঠেন আর্ন্তজাতিক। গানের খাতায় স্বরলিপি লেখেন অগণিত তরুণের বুকপকেটে। ফ্যাশন আইকন হন তরুণীদের।
এখনও বাংলা সিনেমাপ্রেমীদের মনের গহীনে ভেসে উঠে, সেই ভীষণ মায়াময় মুখ। সৌন্দর্য আর অভিনয় গুনেই তিনি হয়ে উঠেন অনন্যা। রুপালি পর্দায় রাজত্ব করেন দশকের পর দশক। তাঁর নাম ববিতা। ১৯৫৩ সালের আজকের দিনে পৃথিবীর মুখ দেখা সবার প্রিয় অভিনেত্রী ববিতা পা রাখলেন জীবনের ৬৮ বছরে, আজ জন্মদিন তাঁর।
গ্রামের দস্যি কিংবা শহুরে আধুনিক মেয়ে, গল্প- উপন্যাসের চরিত্র অথবা বীরাঙ্গনা, এক অভিনেত্রীর কতো না রূপ। অভিনয়গুণে একের পর এক পুরস্কার পেয়ে ববিতা ক্যারিয়ারে হয়ে উঠেন ‘পুরস্কার কন্যা’। স্থান পান বাংলা সিনেমার নায়িকাদের প্রথম সারিতে।
কেন্দ্রীয় চরিত্রে প্রথম অভিনয় ‘শেষ পর্যন্ত’ সিনেমায়। তখনকার সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক রাজ্জাকের বিপরীতেই অভিষেক হয় তার। সেই থেকে শুরু, ‘টাকা আনা পাই’ সিনেমায় অভিনয় করে হন আলোচিত। ‘স্বরলিপি’ সিনেমার জনপ্রিয়তা তার অবস্থান শক্ত করে সিনেমার আঙ্গিনায়। সত্তরের দশকে একের পর এক কালজয়ী সিনেমায় অভিনয় করে হয়ে উঠেন অন্যতম জনপ্রিয় ও আস্থাভাজন অভিনেত্রী। আরও অভিনয় করেন ‘আবার তোরা মানুষ হ’, ‘আলোর মিছিল’, ‘লাঠিয়াল’, ‘নয়ন মনি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ সহ অনেক সিনেমায়। তিনি অভিনয় করেন সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনী সংকেত’ সিনেমাতেও। নিজেকে সমৃদ্ধ করেন আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে!
এরপর আশির দশকে, বাণিজ্যিক সিনেমার পরীক্ষিত নায়িকা হিসেবে নিজেকে করেছেন প্রতিষ্ঠিত। অভিনয় করেন দূরদেশ, মিস লংকা, অবুঝ হৃদয়রে মত জনপ্রিয় অনেক বাণিজ্যিক সিনেমায়। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে নায়িকা হিসেবে সফল হওয়ার পর নব্বই দশকে আসেন চরিত্রাভিনেত্রী হয়ে। সেই থেকে অভিনয় করেছেন ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’ থেকে ‘পুত্র এখন পয়সাওয়ালা’ পর্যন্ত।
সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করা ববিতা ব্যক্তিজীবনে নানা বাঁধা পেরিয়ে হয়ে উঠেন সফল এক মানুষ। সিনেমায় এখন তিনি অনিয়মিত, তবে ফিরে এসে নিজেকে আরো নন্দিত করবেন এই প্রত্যাশাই এখন তার ভক্তদের।
Leave a reply