সান্তাহার বিসিআইসির বাফার গুদামে ‘ফাস্ট ইন ফাস্ট আউট মেথড’ মানেন না কর্মকর্তারা। অব্যবস্থাপনা, মজুদ ও বিতরণে চরম অনিয়মের ফলে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা প্রায় ২০ হাজার টন ইউরিয়া সার জমাট বেঁধে নষ্ট হওয়ার পথে।
জানা গেছে, একসময় সান্তাহার বিসিআইসি বাফার গুদামটি দেশের উত্তরাঞ্চলে সার সরবরাহের ট্রানজিট গুদাম হিসেবে ব্যবহার করা হতো। সম্প্রতি বিভিন্ন জেলায় সার মজুদের নতুন-নতুন গুদাম গড়ে উঠায় এটি আর ট্রানজিট গুদাম হিসেবে ব্যবহার করার দরকার হয় না। নওগাঁর ৮ টি উপজেলায় নিবন্ধিত ৯৩ জন ডিলারের মাধ্যমে কৃষকের মাঝে ইউরিয়া সরবরাহ করা হয় এখান থেকে।
সার ডিলাররা অভিযোগ করে বলেন, সান্তাহারের গুদামটিতে দীর্ঘদিন ধরে অব্যবস্থাপনায় ইউরিয়া মজুদ রাখায় শিলাখণ্ডে পরিনত হয়েছে অধিকাংশ সার। একই সাথে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন গুদামের বাইরে বিপুল পরিমাণ সার খামাল দিয়ে রাখায় গুদাম এলাকার প্রতিবেশ নষ্ট হচ্ছে। নানা সমস্যায় পড়ছেন তারা।
গুদামের পাশের সান্দিরা গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, প্রায় পাঁচ বছর ধরে খোলা আকাশের নিচে বিপুল পরিমাণ সার খামাল দিয়ে রাখা হয়েছে। রোদ বৃষ্টিতে সারগুলো ছড়ি পড়ছে আশপাশের ফসলের মাঠ ও জলাশয়ে। এতে জমির ফসল, জলাশয়ের পানি, মাছ ও পরিবেশের দারুন ক্ষতি হচ্ছে। দূর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন তারা।
পুরনো জমাট বাঁধা ইউরিয়া বিক্রি করতে না পারায় সার গ্রহণে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন ডিলাররা। বিষয়টি নিয়ে ২০১৭ সালের শেষ দিকে নওগাঁ জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তারা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে গুদামের মজুদ পরিস্থিতি জানতে তদন্তে নামে প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমানকে প্রধান করে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করে দেয়া হয়। তদন্ত টিম গুদাম পরিদর্শন করে অল্প দিনের মধ্যেই প্রতিবেদন দাখিল করেন।
তদন্ত টিম তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন- সান্তাহার বাফার গুদামে কাফকো থেকে ৭২৪.৬১, শাহজালাল থেকে ৭৪৮.১৬ ও আমদানীকৃত ৩০ হাজার ২২০.৬৪ মেট্রিক টন সার মজুদ আছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার ৯৪৫.০৫ টন সার ১৮ খামালে গুদামের বাইরে খোলা আকাশের নিচে ত্রিপল দিয়ে আবৃত করে রাখা হয়েছে। যার পুরোটাই জমাট বেঁধে শীলাখন্ডে পরিনত হয়েছে।
এছাড়া একই অবস্থা গুদামের ভেতরে রাখা প্রায় ৮ হাজার টন ইউরিয়া সার।
তদন্ত টিমের প্রধান মাহবুবুর রহমান জানান, গুদামে পরিদর্শনে গেলে সারের খামালগুলো সাজানো গোছানো পাওয়া যায়নি। গুদামের বাইরের খামালে রাখা সার রোদ বৃষ্টিতে ছড়িয়ে পড়েছে চারদিক। এছাড়া দীর্ঘদিন গুদামজাত থাকায় ইউরিয়াগুলো ক্রমেই গুনাগুন হারাচ্ছে।
এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো: মিজানুর রহমান জানান, তদন্তে গুদাম কর্মকর্তাদের অনিয়মের সত্যতা মিলেছে। তারা ফাস্ট ইন ফাস্ট আউট মেথড ফলো করেন নি। ফলে পুরনো সারের মজুদ বেড়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর ঘটনা তুলে ধরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপর মহলে জানানো হয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
সান্তাহার বাফার গুদাম ইনচার্জ আব্দুল মালেক জানান, সান্তাহার গুদামের ধারণ ক্ষমতা ১৬ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে মজুদ আছে ২৮ হাজার টন। ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত থাকায় অধিকাংশ সারই বাইরে খামাল দিয়ে রাখা হয়েছে।
তবে সার মজুদ ও বিতরণে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে কোন মন্তব্য করতে রাজি হোননি তিনি।
Leave a reply