৩০ বছরের দাম্পত্য জীবন; স্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ আফজাল হোসেন

|

৩০ বছরের দাম্পত্য জীবন; স্ত্রীর প্রসংশায় পঞ্চমুখ আফজাল হোসেন

তাজিন হালিম মনা ও আফজাল হোসেন।

চিরসবুজ তারকা হিসেবে তিনি খ্যাত আফজাল হোসেন। ১৯৮০ এর দশকে বাংলাদেশের নাটকে সুবর্ণা-আফজাল জুটি বিশেষ দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে। অভিনয় করেন- দুই জীবন, নতুন বউ ও পালাবি কোথায়’র মতো সিনেমায়। ১৯৮৪ সালে তিনি বিজ্ঞাপন নির্মাণে যুক্ত হন। ১৯৯২ সালের ৮ আগস্ট তাজিন হালিম মনাকে বিয়ে করেন তিনি। তাদের দুই পুত্র সন্তান আরাফ আফজাল ও ঈমান আফজাল।

এদিকে দাম্পত্য জীবনের ৩০ বছর পেরিয়ে এসে আফজাল হোসেন জানালেন নিজের অভিজ্ঞতার কথা। দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর ভূমিকাকেই বড় করে দেখলেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া স্ট্যাটাসে স্ত্রী মনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে এই অভিনেতা জানালেন স্ত্রীকে ছাড়া তিনি কতটা অসম্পূর্ণ!

আফজাল হোসেনের স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘তিরিশ বছর হয়ে গেল একসাথে আছি। যথার্থ শোনায়, তার সংসারে তার সাথে বাস করি বললে। তিরিশ বছর কেটেছে। আমাদের সন্তানদের জন্ম তারিখ বলতে পারবো- কার কত বয়স হলো বলতে গেলে হিসাবে বসতে হবে। তার চেয়ে সহজ মনাকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নেয়া।

আরাফ ও বউ দেশের বাইরে থাকে- মনা তাদের প্রায় রোজকার খবর বলতে পারবে। ঈমানের স্কুলের বেতন কতো, আমার জানা নেই। আমি জানি না মাসের বাজার খরচ, চালের দাম, লবণ কত টাকা কেজি। জানা নেই রান্নাঘরের চুলো জ্বলছে না, বেসিনে পানি আটকে গেছে বা ঘরে বৈদ্যুতিক কোনো সমস্যা হলে কোনটার জন্য কাকে ফোন করতে হবে।

এখন আমার ব্লাডপ্রেসার কত থাকে। সকালে কি কি ওষুধ খেতে হয় বা রাতে কী কী খাই, সবই জানে সে। আমি জানি না, আম্মাকেও এখন প্রতিদিন কতগুলো ওষুধ খেতে হয়, ডাক্তার কোনটা নতুন যোগ করেছে। কোন কোনটা শেষ হওয়ার পথে।

মাসে গ্যাস, বিদ্যুৎ বিল কত আসে, গাড়ির সার্ভিসিং কবে, কবে আজিমপুর গোরস্থানে পাপা, মা’র কবরের দেখভাল করার মানুষটাকে টাকা পাঠাতে হবে, সবই তার মনে মাথায় সাজানো।

আব্বার মৃত্যুবার্ষিকী অমুক তারিখে, পারুলিয়ায় কিছু করা হবে নাকি মিরপুরের এতিমখানায়- মাথায় থাকে।

শিশুকালে আরাফকে কোলে নিয়ে ঘুরতো বা তার সাথে খেলতো যে মেয়েটা, তার এখন দুটো বাচ্চা থাকে সিলেটে। একদিন হয়তো তার সংসারের এক অসুবিধার কথা বলেছিল- মনার মাথায় আছে। সমস্যা আছে না গেছে খোঁজ নেয়। যা করতে পারে করে। অবাক হই, এত কিছু একটা মাথায় থাকে কীভাবে!

দুপুরে ইমান খেতে চেয়েছে কাও পাট খাই, তার রেসিপি পড়তে পড়তে মনার মনে হয়ে যায় আরিমা, পরিবারের সবচেয়ে ছোটজন (বোনের মেয়ে) খানিক আগে একটা ছবি এঁকে পাঠিয়েছে- মামনা দিস ইজ ফর ইউ। কেমন হয়েছে বা খুশি হয়েছি, জানানো হয়নি তাকে।

নির্ভানা, আমাদের আম্মু (ছোটো ভাইয়ের মেয়ে) ইদানীং খুব আগ্রহে উৎসাহে কেক পেস্ট্রি বানায়, তার এক দুশ্চিন্তা- কেকের ভিতরটা কেন তত নরম থাকছে না। তা নিয়ে আম্মুর সঙ্গে কথা হওয়া দরকার।

শীলা, ছোটো ভাইয়ের স্ত্রীর শরীর ভালো নেই। এটাও জানে, একজনও সাহায্যকারী নেই রুমার বাসায়। এ রকম অজস্র দুশ্চিন্তা, সমস্যা ও সমাধানের চেষ্টা মগজে বয়ে সে হাসিমুখে ঠান্ডা মাথায় চলতে ফিরতে পারে।

এমন বলেই সাহায্যকর্মী সরবরাহকারী, ইন্টারনেট ও পেস্টকন্ট্রোল কর্মী, ট্রেডমিল মেকানিক, দরজি, মাংস বিক্রেতা, মুদি দোকানি, সোফা মিস্ত্রি, রং মিস্ত্রি ইত্যাদি নানা পরিচয়ের মানুষেরা পছন্দ করে ম্যাডাম, আপাকে।

এতো কিছু বলার পর মনে হতেই পারে, আমি তাহলে একটা অযথা লোক। যুক্তি খাটালে অন্য মানেও পাওয়া যেতে পারে। জীবনে ভালো কিছু করেছি। মনা, সেই পূন্যেরই ফল।

অনেক বছর ছবি আঁকিনি। আঁকাআঁকিতে আবার ফিরতে পারবো মনে হতো না। মনার বিশ্বাস অটুট ছিল, পারবো। বছরের পর বছর আমাদের পুরো বাড়ির সব ঘরের দেয়াল সে ফাঁকা রেখে দেয়। বলেছিল, ফাঁকাই থাকুক। নিজের আঁকা ছবি ঝোলানোর আগে কারও ছবি দিয়ে ঘর সাজানো যাবে না। সেই নিঃশব্দ জোর খাটানোর ফলাফল, এখন ঘরের দেয়াল ফাঁকা নেই।

জগৎ ও জীবন শেখার জন্য। রোজ আমি তার কাছ থেকে শিখি। ঘরের ধুলো পরিষ্কার আর জলরঙে ছবি আঁকা- দুটোতেই নিবেদন লাগে। একইরকম মনোযোগ, নিষ্ঠা লাগে।

একশোরকম ঘটনার মধ্যে থেকেও নিজের জলরংয়ের ছবি কিভাবে আরও ভালো করা যায়- সে জন্য মনা যখন ইউটিউবে বিশ্বখ্যাত জলরং শিল্পীদের অনুশীলন দেখে, যেভাবে দেখে অবাক হই। ভাবি, নিজে শিল্পী হতে চেয়েছি, তবে এতটা মনোযোগী কি কখনো হতে পেরেছি?

সৃষ্টিকর্তা আমাদের ভালো রেখেছেন, রাখবেন- এই আশা। আরও আশা, আমরা উভয়ের জন্য উভয়েই যেন আরও কিছুকাল সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে পারি। শুভ বিবাহবার্ষিকী মনা।’

এনএনআর/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply