সাপ হয়ে দংশন নাকি ওঝা হয়ে চিকিৎসা, আফগানিস্তানের চলমান সংঘাতে কোন ভূমিকায় পাকিস্তান তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তালেবান যোদ্ধাদের নানাভাবে সহায়তা করছে তারা। তবে পাকিস্তানের দাবি আলোচনার মাধ্যমে মধ্যস্থতা করতে চায় তারা।
সরকারি বাহিনীর হামলায় সম্প্রতি আহত তালেবানদের পাকিস্তানের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার ঘটনা নিয়ে তালেবানকে সাহায্য করার অভিযোগ আসে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। তবে আফগান তালেবানের সাথে ইসলামাবাদের সুসম্পর্কের বিষয়টি নতুন নয়। জিহাদিদের সাথে কাবুলের শান্তি আলোচনায়ও অন্যতম মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা রেখে আসছে দেশটি।
বুধবারও তালেবানের দাবির কথা তুলে ধরেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি জানান, আফগান প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তালেবান তাদের সাথে আলোচনায় বসবে না। পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দাবি, গেলো ৩/৪ মাস যাবৎ সরকারের সাথে তালেবানের মুখোমুখি বৈঠক করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে পাকিস্তান। কিন্তু শীর্ষ নেতারা বারবারই প্রত্যাখান করছেন প্রস্তাব। তাদের একটাই শর্ত যতোদিন আশরাফ ঘানি ক্ষমতায় থাকবে; তারা আলোচনায় বসবেন না। কারণ, তালেবানের ঘাড়ে বন্দুক রেখে অস্থিতিশীলতার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানকে দায়ী করছে এই সরকার।
তবে রাজনৈতিক সমাধানের জন্য পাকিস্তানের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন আছে কাবুলের। আফগান সরকার প্রকাশ্যেই অভিযোগ জানিয়েছে ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে। সমালোচনার মুখে বুধবার পাকিস্তানের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন দুই শীর্ষ কর্মকর্তা। তাদের দাবি, আফগানিস্তান ইস্যুতে পরিকল্পিত অপপ্রচার চলছে ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি জানান, যে কোনো মূল্যে তারা এই শান্তি আলোচনা চালিয়ে যাবেন। তিনি বলেন, আফগান সংঘাত সংশ্লিষ্ট সব পক্ষগুলোর সাথে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। কারণ আফগানিস্তানে অস্থিতিশীলতার কারণে এর প্রভাব পড়ছে পুরো অঞ্চলে। ভূ-রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আঞ্চলিক অর্থনীতি। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোনো বিকল্প নেই।
পাশাপাশি পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মোয়িদ ইউসুফ বলেন, পাকিস্তানই একমাত্র দেশ যারা আফগান সংকট সমাধানে নিরবিচ্ছন্নভাবে কাজ করে আসছে। অথচ আমাদের সহায়তা না করে উল্টো পাকিস্তান বিরোধী মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে আফগান সরকার। এর সাথে ভারত যে জড়িত সেই প্রমাণও আমরা পেয়েছি। অথচ আফগান যুদ্ধের কারণে ৮০ হাজারের বেশি হতাহত, ১৫০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য সংকট আর কূটনৈতিক চাপের বোঝা বহন করতে হচ্ছে পাকিস্তানকে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, নিজেদের সিদ্ধান্তের কারণেই প্রশ্নবিদ্ধ পাকিস্তানের অবস্থান। তাই আফগান-তালেবান ইস্যুতে নিজেদের ভূমিকা স্পষ্ট করতে হবে পাকিস্তানকে।
Leave a reply