সাড়ে তিনশ’ ভিক্ষুককে নিময়িত খাওয়াচ্ছেন হোটেল ব্যবসায়ীসহ কয়েক যুবক

|

পাবনার প্রায় ভিক্ষুকদের নিয়মিত খাওয়ানোর বন্দোবস্ত করেছেন স্থানীয় এক হোটেল ব্যবসায়ী ও কয়েক যুবক।

পাবনা প্রতিনিধি:

নানা জায়গা থেকে পাবনা শহরে ভিক্ষে করতে আসা প্রায় সাড়ে তিনশ অসহায় ভিক্ষুকদের প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুরে খাবারের আয়োজন করেন তারা স্থানীয় একটি হোটেলে সপ্তাহের এদিন ভিক্ষের আশায় ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত এসব ভিক্ষুকেরা খুঁজে পেয়েছেন অন্তত একবেলা খাবারের ঠিকানা। উদ্যোক্তারা বলছেন, এ ধরনের অসহায়দের জন্য কিছু করতে পেরে তারা মানসিক প্রশান্তি পান। তারা মনে করেন, সৎ উদ্দেশ্যে নেয়া এমন উদ্যোগ হতে পারে অনেকের জন্য অনুকরণীয়।

হোটেলটিতে প্রতি বৃহস্পতিবার খাবার দেয়া হয় প্রায় সাড়ে তিনশো থেকে চারশো ভিক্ষুককে। সপ্তাহের এদিনে এসব ভিক্ষুক নানান জায়গা থেকে ভিক্ষে করতে পাবনা শহরে আসে। পাবনার প্রধান সড়ক, বড় বাজার, নিউ
মার্কেট, বড় ব্রিজসহ শরের নানা বিপনী কেন্দ্রে দিনভর এদিন ভিক্ষে করেন তারা। প্রতিদিনই তাদের হাত বাড়ানোর দিন হলেও সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবারে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে এসব ফকির অসহায়দের। অন্ধ, পঙ্গু, শারিরিক বিকলাঙ্গ নানান রকমের পুরুষ ও নারী ভিক্ষুকের সামান্য সাহায্যের আশায় হাত বাড়ানোর দৃশ্য পুরো শহরময় থাকে এদিন।

নানা প্রান্ত থেকে খুব সকালে বেরিয়ে এই ভিক্ষুকরা চলে আসেন পাবনা শহরে একটু সহায়তা পাবার আশায়। তবে বৃহস্পতিবার ঠিক দুপুর দুটোর দিকে পাবনা শহরের রূপকথা সড়কের আল-আমিন হোটেল হলো তাদের দুপুরের খাবারের ঠিকানা। এটা চলছে আজ তিন বছর হলো, শুরু করেছিলেন হোটেল মালিক আমিন উদ্দিন। আমিন উদ্দিন এক সময়ে অন্যের হোটেলে কাজ করতেন
প্লেট ধুঁতেন। কঠোর পরিশ্রম আর চেষ্টায় এখন তিনি নিজেই হয়েছেন হোটেলের মালিক। তিনি জানেন কতো কষ্ট করে নিজেকে এগিয়ে নিতে হয়।

তিনি খাবার বেঁচে গেলে তা তুলে দিতেন এসব অসহায়দের হাতে। এরপরে তাদের জন্য সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবারে কিছুটা বেশি খাবার রান্না করতেন এসব অসহায় দরিদ্রদের কথা ভেবে। তখন এখানে খাবার খেতো বিশ জনের মতো ফকির।

এক সময় পাবসা সদরের কোলাদী গ্রামের বাসিন্দা বর্তমান কানাডা প্রবাসী শমসের আলী হেলাল নিজ জেলাতে বেড়াতে এসে হোটেল মালিকের এই কাজ দেখে অভিভূত হয়ে নিজে এর সাথে সম্পৃক্ত হন। প্রতি সপ্তাহে তিনিও কিছুটা সহায়তা দেন এ কাজে। কানাডা প্রবাসী হেলাল ফিরে যাবার সময়ে কয়েকজন যুবককে বলেছিলেন, নিজের খেদমত চাইলে এসব ভিক্ষুক-মিসকিনদের খাবারের বিষয়টা মাথায় রেখে ব্যবস্থা করবে নিজেদের মতো। হোটেল মালিক আমিন ও প্রবাসী হেলালের এমন কাজ দেখে স্থানীয় কয়েকজন যুবক অনুপ্রাণিত হয়ে এই অনন্য মানবিক কাজ ধরে রেখেছেন।

কখনও একা কখনও দু তিনজন বা কখনো সাতজন বন্ধু মিলে চালিয়ে নিয়েছেন ভিক্ষুকদের খাওয়ানোর কাজটি। হোটেল মালিক প্রতি বৃহস্পতিবারে রান্না ও প্যাকেট করে দেন তার কর্মচারীদের দিয়ে। যাবতীয় তেল মসলা সরবরাহ করার পাশাপশি নিজে সশরীরে শরীক থাকেন এসব যুবকদের কর্মকান্ডের সাথে। বিশ জন ভিক্ষুককে দিয়ে শুরু করা এই খাবার বিতরণের কর্মসূুচি ধীরে ধীরে বাড়তে বাড়তে আজকে প্রতি বৃহস্পতিবারে এখানে দুপুরে খাবার পান সাড়ে তিনশো থেকে চারশো ভিক্ষুক-মিসকিন।

অভূক্ত থাকা এসব অসহায় ভিক্ষুকরা স্থানীয় যুবকদের এমন উদ্যোগে খুশি। বলছেন, আমরা অসহায়রা সারাদিন ভিক্ষে করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। অসুস্থ হলেও ভিক্ষে করতে হয়। এরা যে আমাদের খাবারের জন্য এ ব্যবস্থা করেছে আমরা অনেক খুশি।

খাবার হিসেবে খিচুড়ি, ভাত ও মুরগীর মাংস দেয়া হয় বলে জানান এ অসহায় মানুষেরা। অসহায় এসব ফকির মিসকিনদের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তি ও খুশির আবহ সৃষ্টি করেছে এসব যুবকদের শর্তহীন-স্বার্থহীন এমন উদ্যোগ।

ভিক্ষুকদের খাবার বিতরণের সাথে সম্পৃক্ত যুবকেরা জানান, তারা হোটেল মালিক আমিন ও প্রবাসী হেলাল ভাইয়ের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেরা বন্ধুরা মিলে চালিয়ে নিয়েছেন এই মানবিক কাজটি। এতে তাদেরকে মানসিক প্রশান্তি দেয় বলে জানিয়েছে তারা। অসহায় মানুষদের জন্য যে তারা কিছু করতে পারছেন এটা ভেবেই ভালো লাগে তাদের। আর এসব ভিক্ষুকেরা নানা জায়গা থেকে ভিক্ষে করতে আসে, তাদের মুখে একটু খাবার তুলে দিতে পারলে তারা যেমন খুশি হন অনেক, তেমনি নিজেরাও খুশি হন। তারা মনে করেন যদি কেউ মনে করেন কয়েকজন মিলে এমন উদ্যোগ নেবেন তবে তা করে ফেলা সম্ভব ও এর মাধ্যমে মানুষও উপকৃত হবে। তারা মনে করেন সুন্দর শুভ একটি ইচ্ছেই এনে দেবে প্রশান্তি।

রূপকথা সড়কে অবস্থিত আল-আমিন হোটেলের মালিক মানবিক উদ্যোক্তা আমিন উদ্দিন বলেন, এখন প্রতি বৃহস্পতিবার সাড়ে তিনশো থেকে চারশো ফকির-মিসকিন এখানে দুপুরের খাবার খাচ্ছে। এটা আমার জন্য অনেক আনন্দের বিষয়। যদি আরো কিছু মানুষ সহযোগিতা করতো তাহলে আরও বেশি অসহায়দের জন্য আয়োজন করতে পারতেন বলে জানান তিনি।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply