ফুটবল সংগঠকের ছদ্মবেশে ফিক্সিং মাফিয়া

|

বসুন্ধরা কিংসের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ক্রীড়াঙ্গনে যুক্ত হলেও তিনি ম্যাচ ফিক্সিং মাফিয়ার প্রভাবশালী সদস্য।

মাঠে ফুটবলারদের খেলা চলাকালীন সময় ইশারায় আহত হবার নাটক করতে বলতো কোচিং স্টাফরা। এরপর মাঠে ঢুকে পরের দশ-বিশ মিনিট কি করতে হবে তা জানিয়ে দিতো ফুটবলারদের। এভাবেই ফিক্সিং সিন্ডিকেট চালাতো মিনহাজ ও তার গ্যাং। কোথা থেকে উঠে আসলো এই মিনহাজ! কিভাবে এতো সুযোগ পেলো দেশের শীর্ষ পর্যায়ে খেলা একটি দলের ভবিষ্যত নষ্ট করার!

কে এই মিনহাজ? সংগঠকের মুখোশ পরে প্রিমিয়ার লিগে আরামবাগের মত ঐতিহ্যবাহী ক্লাবকে রীতিমত ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। কিভাবেই বা এমন ব্যক্তি এলো দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে!

মিনহাজের অতীত নিয়ে রয়েছে অনেক ধোঁয়াশা। বসুন্ধরা কিংসের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ক্রীড়াঙ্গনে যুক্ত হলেও ছিলেন নাকি একটি সিনেপ্লেক্সের টিকেট ম্যানেজার। কারো কারো দাবি তিনি নাকি এক সময় লালন করতেন শহরে ত্রাস সৃষ্টিকারী একটি সন্ত্রাসী গ্রুপও।

গত বছরের মার্চেও এই মিনহাজ ছিলেন লিগের শীর্ষদল বসুন্ধরা কিংসের সাধারণ সম্পাদক। লিগ কমিটির বেশ কয়েকটি সভায় ক্লাবটির প্রতিনিধিত্বও করেছে ফুটবল সংগঠকরূপী এই জুয়াড়ি।

বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ বলেন, আমাদের প্রোফেশনাল ফুটবল লীগ কমিটিতে গত ১৭ মার্চের মিটিংয়ে জনাব মিনহাজ অংশগ্রহণ করেন। এরপর আমাদেরকে চিঠি দিয়ে জানানো হয় যে, বসুন্ধরা কিংসের মিডিয়া ম্যানেজার জনাব শাইখ এরপর থেকে বাফুফের প্রোফেশনাল ফুটবল লীগ কমিটির মিটিংয়ে বসুন্ধরা কিংসকে রিপ্রেজেন্ট করবেন।

এরপর আর্থিক দৈন্যতা সমাধানের কথা বলে আরামবাগ ক্লাবের দায়িত্ব নেন মিনহাজ। তার সিদ্ধান্তেই কিংসের হোম ভেন্যু নীলফামারীতে করা হয়ে ক্লাবের আবাসিক ক্যাম্প। এখানেই শেষ নয়,হাই প্রোফাইলের বিদেশি খেলোয়াড়দের দলে নিয়ে ক্লাব কর্তাদের পড়িয়ে দেন রঙ্গীন চশমা। তবে ক্লাব কর্মকর্তাদের সন্দেহের শুরু লিগের প্রথম পর্বের পরই।

আরামবাগ ফুটবল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী জানান, টঙ্গী, নীলফামারী আর আফতাবনগরে সে খেলোয়াড়দের ক্যাম্পের আয়োজন করেছিলো। যেসব জায়গায় ডেইলি যাতায়াত করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না সেসব জায়গায় ক্যাম্পের আয়োজন করতো সে।

লাইভ ফিক্সিং, ম্যাচ ম্যানুপুলেশন বা স্পট ফিক্সিং সবই হতো মিনহাজের পরিকল্পনায়। আর দলের সাথে মাঠে থেকে তার হয়ে কাজ করতো কোচ সুব্রত আর তার দুই সহযোগী।

জুয়াড়িদের বাজির স্পট চূড়ান্ত হলে তাদের ইশারায় আহত হয়ে যেতেন মাঠে থাকা ফুটবলার…এই সুযোগে মাঠে ঢুকে চক্রে থাকা ফুটবলারদের পরের দশ-বিশ মিনিটে কি করতে হবে তা বলে দিতেন ট্রেনার আর ফিজিও।

ক্লাব কর্মকর্তাদের বিশ্বাস, সব ফুটবলার তাদের কথা শুনতো না। তবে যারা মন্দ কাজে জড়িত সন্দেহভাজন ৬ জনকে আগেই ছাঁটাই করেছে ক্লাব। কোচিং স্টাফদেরও বিদায় দেয়া হয়। মিনহাজের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্তের সাথে অন্যের ভুলের শাস্তি ক্লাবকে না দেয়ার আবেদন জানিয়ে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন আরামবাগের কর্তারা।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply