আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে দিবসটি। এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘সময় এখন নারীর : উন্নয়নে তাঁরা, বদলে যাচ্ছে গ্রাম-শহরে কর্ম জীবনধারা’।
পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীর অধিকার রক্ষা, নারী-পুরুষের সমতা ও নারীর প্রতি ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠাই এবারের নারী দিবসের মূল লক্ষ্য। দিবসটি উপলক্ষে আলাদা বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বে রোড মডেল হিসেবে স্বীকৃত। বর্তমান সরকার নারী শিক্ষার বিস্তার ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কর্মক্ষেত্রে অবাধ প্রবেশ ও নীতি নির্ধারণে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে।
নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানে রাষ্ট্রীয় ও সমাজ জীবনের সব কর্মকাণ্ডে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকার গত ৯ বছরে নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। আমরা জাতিসংঘের এমডিজি অ্যাওয়ার্ড, সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড, প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন, এজেন্ট অব চেঞ্জ, শিক্ষায় লিঙ্গ সমতা আনার স্বীকৃতিস্বরূপ ইউনেস্কোর ‘শান্তিবৃক্ষ’সহ অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছি।
নারী দিবসের ইতিহাস ঘাটলে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা লক্ষ্য করা যায়। ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্ক শহরের সুই কারখানার নারী শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা শ্রমের দাবিতে রাজপথে বিক্ষোভ করেন। তখন ১২ ঘণ্টার বেশি কারখানায় শ্রম দিতে হতো, ছিল না বিশ্রামের সুযোগ। ১৮৬০ সালে নারী শ্রমিকরা ‘নারী শ্রমিক ইউনিয়ন’ গঠন করে অধিকার আদায়ের আন্দোলন চালাতে থাকে।
১৯০৮ সালে ৮ ঘণ্টা কাজের সময়, ভোটাধিকার ও বৈষম্য নিরসনের দাবিতে নিউইয়র্কের রাজপথে আন্দোলন করেন ১৫ হাজারের বেশি নারী শ্রমিক। এতে যোগ দেয় সাধারণ নারীরাও। একই বছরে সোশ্যাল ডেমোক্রেট নারী সংগঠন আয়োজিত সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ ঘোষণা করেন। ১৯১১ সালের ১৯ মার্চ প্রথম বিভিন্ন দেশে নারী দিবস পালন করা হয়। প্রথমদিকে মূলত বামপন্থীরাই দিবসটি পালন করতেন। ১৯১৪ সালে সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, ডেনমার্কসহ বেশ কয়েকটি দেশে নারী দিবস পালন করা হয়। ১৯১৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার পর থেকে নারী দিবস গুরুত্ব সহকারে পালন করা হয়।
১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ হিসেবে পালন শুরু করে। ১৯৭৭ সালে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে আহ্বান জানায় ৮ মার্চকে নারী দিবস স্বীকৃতি দেয়ার। এরপর থেকে বিশ্বজুড়ে পালিত হয়ে আসছে দিবসটি। ১৯৭৯ সালে জাতিসংঘ ‘নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ’ প্রণয়ন করে।
যমুনা অনলাইন: টিএফ
Leave a reply