কোপা আমেরিকার সেই রুদ্ধশ্বাস ফাইনালের পর এই প্রথম মুখোমুখি দুই চিরপ্রতিদ্বন্ধী আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল। এবারও উত্তেজনার পারদ চরমে উঠলো। তবে মাঠের খেলা দিয়ে নয় বরং কোয়ারেন্টাইন নীতি ভঙ্গের জেরে তর্কাতর্কি, বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির কারণে। ফুটবল ভক্তরা খেলার মাঠে মেসি-নেইমারদের জমজমাট লড়াই আশা করলেও মাত্র ৬ মিনিটেই থেমে যায় ম্যাচ। তবে এই হাতাহাতি কিন্তু দু’দলের খেলোয়াড়দের মাঝে হয়নি, বরং ব্রাজিলের ফেডারেল স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থা- আনভিসা আর্জেন্টিনার ৪ চার খেলোয়াড়ের মাঠে থাকা নিয়ে আপত্তি জানালে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের সাথে স্বাস্থ্যকর্মীদের বচসা দেখা দেয়। সেটিই রূপ নেয় হাতাহাতি-ধাক্কাধাক্কিতে।
৬ মিনিটের মাথায় আর্জেন্টাইন খেলোয়াড় ওটামেন্ডিকে ব্রাজিলের স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মী ধাক্কা দিয়ে বসে। রক্ষণদুর্গের পরীক্ষিত সৈনিক ওটামেন্ডিও ছেড়ে দেয়ার পাত্র নন। তিনিও দিলেন পাল্টা ধাক্কা। এরপর দ্রুত অবনতি ঘটে মাঠের পরিবেশ। একে একে জড়ো হতে থাকে দুই দলের খেলোয়াড়রা। এসময় দুই দলের তারকা খেলোয়াড় মেসি ও নেইমারও চেষ্টা চালাতে থাকে পরিস্থিতি সামলে নেয়ার। কিন্তু সমোঝোতায় পৌঁছানো যায়নি। তাই মাঠ ছেড়ে সবাই চলে যায় ড্রেসিং রুমে।
এরপর বেশ খানিকটা সময় উৎকণ্ঠায় মাঝে কাটলেও মাঠে আবারও ফিরে আসেন মেসি। সাবেক ক্লাব সতীর্থ ড্যানি আলভেসের কাঁধেকাঁধ মিলিয়ে মাঠে আসেন মেসি। তবে ততক্ষণে আর্জেন্টিনার জার্সি খুলে প্র্যাকটিসের শার্ট গায়ে জড়িয়ে নেন। মেসি এসে বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা করেন। এরপর আবারও ফিরে যান সতীর্থদের কাছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ম্যাচটি এখনো বন্ধ আছে।
মূলত প্রিমিয়ার লিগের নিষেধ অমান্য করে আর্জেন্টিনার চার ফুটবলার ব্রাজিলের বিরুদ্ধে খেলতে আসায় বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। ওই চার খেলোয়াড়ের তিন জন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেস, ডিফেন্ডার ক্রিস্তিয়ান রোমেরো ও মিডফিল্ডার জিওভানি লো সেলসো ছিলেন সফরকারীদের শুরুর একাদশে। ব্রাজিলের স্বাস্থ্য বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা মাঠে প্রবেশ করে। একপর্যায়ে তাদের সাথে গণ্ডগোলের সূত্র ধরে মাঠ ছেড়ে যায় আলবিসেলেস্তেরা।
আরও দেখুন: ৬ মিনিটেই স্থগিত হয়ে গেল ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ
এর আগে, গত শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ব্রাজিলের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা চার আর্জেন্টাইন ফুটবলারের বিরুদ্ধে দেশটির কোয়ারেন্টাইন আইন ভঙ্গের অভিযোগ এনে তদন্ত শুরু করে। এমিলিয়ানো মার্টিনেজ, জিওভান্নি লো সেলসো, ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো ছাড়াও এ তালিকায় চতুর্থ ব্যক্তি হিসেবে আছেন এমিলিয়ানো বুয়েন্দিয়া।
আর্জেন্টিনা স্কোয়াডে থাকা এই চার ফুটবলার ইংল্যান্ড থেকে আর্জেন্টিনা হয়ে ভেনেজুয়েলা গিয়ে ব্রাজিল এসেছেন।
ব্রাজিলের সাও পাওলোর স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ব্রাজিলের করোনার নিয়মানুসারে ব্রিটেন, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত থেকে অব্রাজিলিয়ানদের ব্রাজিলে সরাসরি প্রবেশের অনুমতি নেই। প্রবেশের ক্ষেত্রে আগেই সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিশেষ অনুমতি নিতে হয়। নয়তো, ব্রাজিলে প্রবেশের পরই সম্পন্ন করতে হবে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন।
অবশ্য, ম্যাচ শুরুর আগে থেকেই পরষ্পরবিরোধী খবর পাওয়া যাচ্ছিল। ব্রাজিলের জাতীয় স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধান এজেন্সি ‘আনভিসা’র বরাত দিয়ে সাংবাদিক স্যাম স্ট্রিট জানিয়েছিলেন, ম্যাচ শুরুর মাত্র দুই ঘণ্টা আগে চারজন আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়কে দেশ ছাড়ার আদেশ দিয়েছে ব্রাজিল। অন্যদিকে, আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্তের গাস্তন এদুলের ভাষ্য ছিল, এতকিছুর পরেও ম্যাচ খেলতে পারবেন এই চারজন। দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা কনমেবল আর্জেন্টিনার ফুটবল সংস্থাকে নাকি এই ৪ জনের খেলার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছে। সেটি সত্যও হয়েছিল। মাঠে নেমেছিলেন ৪ জনের ৩ জন মার্তিনেজ, রোমেরো ও লো সেলসো। খেলাও দারুণ গতিতে এগোচ্ছিল। এরপরেই মাঠে হানা দেয় ব্রাজিলের স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধান বাহিনী। এরপর তো সেই বিরল নাটক।
হাতাহাতির কিছুক্ষণ পর মাঠ ছেড়ে ড্রেসিংরুমে চলে যান আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা। ব্রাজিলের খেলোয়াড়েরা কিছু বুঝতে না পেরে মাঠেই ঘোরাঘুরি করতে থাকেন। খানিকপর ক্যাজুয়াল পোশাকে মাঠে ফিরে বন্ধু নেইমারকে নিয়ে খানিক সমঝোতার চেষ্টাও করেন মেসি। কিন্তু সেটি কাজে দেয়নি। তাই সাক্ষাৎকারে ফুটে ওঠেছে মেসির অসন্তোষ, আমরা ব্রাজিলে তিন দিন ধরে আছি। ওরা ম্যাচ শুরু হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলো কেনো? মাঠেই বা এসব করলো কেনো?
Leave a reply