যৌনতা বিকিকিনি কবে থেকে শুরু হয়েছে তা হিসেব কষে নির্ভুলভাবে বলা কঠিন। তবে পৌরাণিক মন্ত্র অনুসারে, যৌনতা সর্বত্র বিক্রয় হয়। যৌনতার সহজ সাধ্য বিক্রয়ের আদিম কৌশলকে দীর্ঘ দিন ধরে কাজে লাগাচ্ছে গাড়ি নির্মাতারা।
বিগত ষাট ও সত্তরের দশক থেকে এটা খুবই অবধারিত যে গাড়ির বড় বড় প্রদর্শনীগুলো ঝাঁ চকচকে নতুন মডেলের গাড়ি সাথে থাকবে একেটা ‘আই ক্যান্ডি’ মানে সুন্দরী ললনা।
একবিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে এসেও সেই চিরাচরিত চরিত্রই দেখা যাচ্ছে। চলতি বছর, সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আগের তুলনায় কম হলেও একেবারে চোখে পড়ার উপস্থিতি ছিল-একেকটি গাড়ি পাশে এক একজন নারীর।
তবে #মি টু-এর যুগে আমরা এ ধরনের অভিরুচি বিষয়ে কি বলতে পারি? আর কতদিনই বা চলবে এমন?
এ ধরনে কোনো মেলায় আপনি যদি কখনও না গিয়ে থাকেন, তবে আপনাকে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
গণ মাধ্যম ও ব্যসবা-বাণিজ্যে পুরুষরা এখনও বড় মক্কেল। তারাই এখানকার হর্তাকর্তা। আপনি হয়তো বলতে কোথায় সবখানে পুরুষ, এই যে জেনারেল মটরসের প্রধান নির্বাহী ম্যারি বারা, এবং ক্রাইটেরিয়নের লিন্ডা জ্যাকসন একজন নারী।
হ্যাঁ, শুধু তারা নয়; এখানে অনেক নারীই কাজ করছে। তবে এদের বেশিভাগই আপ্যায়ন ও অভ্যর্থনার কাজের সঙ্গে জড়িত। সদালাপী ব্যবসায়িক ধাঁচের কেতাদুরস্ত ও চালনে-বলনে সদালাপী এ সব নারীরা মূলত গাড়ি সম্পর্কে ক্রেতাদের খোঁজ-খবর দেন। এ কাজে আপনি পুরুষদেরও পাবেন, তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে খুঁজতে হবে ‘ফ্লাড লাইট’ জ্বেলে।
একেবারে নতুন মডেলের ঝকমারি গাড়ির সামনে ‘নেত্র শান্তিদায়ক’ ভঙ্গি ও বসনে সেজে কাজ করাটা আদতে কেমন?
এই বিষয়ে বিবিসি দেওয়া ইতালিয় নারী জানান, “নারীদের এ ধরনে কাজের জন্য আসলে এটি সঠিক সময় নয়। কিন্তু একই সময়ে, এটার জন্য নারীরাও দায়ী, তারাই এ ধরনে কাজ বেছে নিয়েছে।”
এ ধরনের কাজে জন্য স্বাচ্ছন্দ্য বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলেও তিনি জানান। উদাহরণস্বরূপ বলেন, দীর্ঘ সময়ে কাজের জন্য উঁচু জুতো পরতে না বলাই উচিত।
ডেভিড ব্রাউন অটোমোটিভের বিপণন পরিচালক মিশেল গে মনে, মডেলে দিকে না তাকিয়ে সুন্দর সুন্দর গাড়ির দিকে মানুষের তাকানো উচিত। গাড়ি নির্মাতাদের তাদের পণ্য আকষর্ণে বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করা উচিত বলেও তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, “সবাই এখানে আসে গাড়ি দেখতে। এখানে আসে গাড়ি নিয়ে কথা বলতে। গাড়ি ভিন্ন অন্য কোনো সুন্দরের দিকে তাকাতে চায় না।”
গে বলেন, “মানুষ এখানে এসে গাড়ি সম্পর্কে জানে এমন মানুষের সঙ্গে কথা বলতে চায়।”
কিন্তু ইউটিউব চ্যানেলে স্বত্ত্বাধিকারী অ্যানা ভিনসন এর সঙ্গে ভিন্ন মত পোষণ করেন। অ্যানা বিভিন্ন গাড়ির মেলা ঘুরে ঘুরে তার চ্যানেলের জন্য ভিডিও তৈরির বিভিন্ন কনটেন্ট সংগ্রহ করেন।
তিনি বলেন, “খুবই ছোট্ট বয়সে আমিও একজন সুন্দরী মডেল ছিলাম। আমি আসলে এটা পছন্দ করি। আমি মনে করি, গাড়িগুলো দেখতে সুন্দর; কিন্তু আমি এও মনে করি, তাদের (গাড়ি) আরেকটু প্রাণবন্ত করতে বাড়তি কিছুর প্রয়োজন আছে বৈকি।”
অ্যানা আরও বলেন, “এটা এমন নয় যে নারীদের মাংসপিণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। আমি এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করি। আমি একজন নারী, এবং আমি নারী হিসেবে নিজেকে সুন্দর দেখতে ভালোবাসি। তবে তারা তাতে একটু বাড়তি ‘মসলা’ যুক্ত করে আরকি।”
এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ যে নারী মডেলরা প্রদর্শনীতে থাকা গাড়িগুলোর প্রতি বাড়তি আকর্ষণ তৈরি করে।
তাদের দাঁড়ানো কিংবা বসার ভঙ্গি অন্যদের থেকে আলাদ, এবং নিমেষে জড়ো করে এক ঝাঁক আলোচিত্রীকে। ছোট ছোট গাড়ি নির্মাতা ও পরিবশকদের জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ব একটা বিপণন কৌশল।
কিন্তু বড় বড় নির্মাতাদের জন্য এটা আরও বেশি আলাদা, এবং আরও বেশি দীর্ঘ ফলদায়ী বিষয়। একজন মডেলের গাড়ির বনেটের ওপর বসার ঢঙ কতটা বিক্রি বাড়াতে পারবে, কড়ায় গণ্ডায় হিসেব করে থাকে বনেদি সব গাড়ি নির্মাতারা।
যদিও বনেদি নির্মাতারা বলছেন, তারা আর অমন নারী মডেল ব্যবহার করে গাড়ির সওদাগরি করতে চান না। কিন্তু এটা ঠিক, কিছু বিশেষায়িত ব্র্যান্ড এরপরও যৌনতার সেই আদিম ফ্যান্টাসিকে বিপণনের কাজে লাগাতে চাইবে।
এ থেকে বুঝা, যৌনতা এখনও বেশ লাভজনক ব্যবসা। জঙ্গল ছেড়ে শার্ট-প্যান্ট পরে আধুনিক নগরে-বন্দরে বসবাস করলেও মানুষের মন-মানষিকতা এখনও পুরোপুরি মানুষ হয়ে ওঠেনি।
যমুনা অনলাইন: এফএইচ
Leave a reply