দেড় বছর ধরে তারিখের পর তারিখ পড়ছে স্কুল খোলার। কিন্তু বারবার তারিখ আসে তারিখ যায়; এমন অবস্থায় স্কুলপাগল আর স্কুলপলাতক সবাই অপেক্ষায় ছিল স্কুল খোলার। শুধু স্কুলশিক্ষার্থীরা কেন, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসাশিক্ষার্থী সবাই তাদের প্রিয় প্রাঙ্গনটি খোলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে। শেষপর্যন্ত ৫৪৩ দিন পর ১২ সেপ্টেম্বর খুললো স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা।
আর ঠিক তার দুদিন আগে বিখ্যাত বাংলা গানের ব্যান্ড দল জলের গানের কভারে মুক্তি পেলো তাদের নতুন গান ’ইশকুল খুইলাছে রে মাওলা, ইশকুল খুইলাছে, গাওসুল আজম মাইজভাণ্ডারী ইশকুল খুইলাছে’। দেশজুড়ে কোমলমতি শিশুদের স্কুল খোলার আনন্দের মধ্যে এই উৎসব আমেজে গানটি সামাজিক মাধ্যমে তুলেছে নতুন আলোড়ন। স্কুল যাদের খুলেছে বা যাদের স্কুলজীবন পার হয়ে গেছে, তারাও দেদারসে শেয়ার করছেন এই গানটি।
তুমুল জনপ্রিয় এই গানটির নতুন সংগীতায়োজন করেছেন পার্থ বড়ুয়া। আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের উদ্যোগে গানটি প্রকাশ হয়েছে আইপিডিসি আমাদের গান নামের ইউটিউব চ্যানেলে। ভিডিও নির্মাণ করেছেন যৌথভাবে রাশিদ খান ও পার্থ বড়ুয়া। গানটি কভার করেছে জলের গানের দল।
তবে এই গানটির মূল গীতিকার ও প্রথম পরিবেশক বাংলা লোকগানের অন্যতম কিংবদন্তি রমেশ শীল বা রমেশ মাইজভাণ্ডারী। এই কিংবদন্তি সুফি মাইজভাণ্ডার সাধক ১৮৭৭ সালে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের বোয়ালখালি থানার অন্তর্গত গোমদন্ডি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালে মারা যান তিনি। তার সবচেয়ে জনপ্রিয় গানগুলোর অন্যতম সুফি ভাববাদী ঘরানার ‘ইশকুল খুইলাছে’ গানটি। যদিও লোকগান গবেষকরা জানান, মাত্র চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াকালীনই চিরতরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল রমেশের স্কুল। তবে ভাব ও সংগীত সাধনার স্কুল আজীবন খুলে রেখেছিলেন এই কিংবদন্তি। ভাববাদের ‘ইশকুলে’ তার অনুসারীর সংখ্যা নিতান্ত কম নয়।
মাইজভাণ্ডারী সংগীদের কিংবদন্তি এই গণসঙ্গীত শিল্পী ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনে এবং সেই সাথে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন পরবর্তী নুরুল আমিন বিরোধী আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছিলেন। তাছাড়া তার সমগ্র সংগীত সাহিত্যে ছিলো গণমানুষের পক্ষের রাজনৈতিক সচেতনতা। নুরুল আমিন সরকারের তীব্র সমালোচনা আর ব্যাঙ্গাত্মক গান রচনা করে করে এই কবিয়াল জেলও খেটেছিলেন।
রমেশ শীল জীবনের শেষ দুই দশকে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রচুর সংবর্ধনায় সম্মানিত হন। ১৯৫৮ সালের ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে সহবন্দীদের আয়োজিত জন্মদিনের সংবর্ধনা, ১৯৬২ সালের ঢাকার বুলবুল একাডেমি প্রদত্ত সংবর্ধনা, ১৯৬৪ সালে চট্টগ্রামের নাগরিক সংবর্ধনা প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
Leave a reply