আফগানদের এখনও তাড়িয়ে বেড়ায় বাগরামের বিভীষিকাময় স্মৃতি

|

পরিত্যক্ত ও প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত বাগরাম কারাগার।

আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের শক্তির অন্যতম কেন্দ্র ‘বাগরাম’ এখন পরিত্যক্ত এক ঘাঁটি। ভাঙাচোরা স্থাপনা, ধ্বংসপ্রাপ্ত অস্ত্রসহ ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চারদিকে। এক সময়ের ভয়ঙ্কর সামরিক কারাগারে নেই কোনো বন্দী। তালেবান ক্ষমতা নেয়ার পর মুক্তি দেয়া হয়েছে সবাইকে। আফগানিস্তানের গুয়ানতানামো নামে পরিচিত জেলের বিভীষিকাময় স্মৃতি এখনও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সাবেক কয়েদিদের।

বাগরামের সামরিক কারাগারকে তুলনা করা হতো কিউবার গুয়ানতানামো বে’র সাথে। বিনা বিচারে আটকে রাখা বা মার্কিন সেনাদের নির্যাতনের বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই কারাগার। সেসব স্মৃতি মনে করে, এখন, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ক্ষুন্ধ সাবেক বন্দীরা, যাদের অনেকেই সক্রিয় তালেবান সদস্য।

বাগরামের সাবেক এক কয়েদী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মার্কিন সেনারা একা একটি কক্ষে এক মাস রেখেছিলো আমাকে, প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ছিল ঘরটা। ছাড়া পাওয়ার পরও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত আমি। ঠিকঠাক কাজ করতে পারি না। আড়াই বছর এখানে থাকার সময় মস্তিষ্কের অনেক ক্ষতি হয়েছে।

বাগরাম ঘাঁটিতে মার্কিন নৃশংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এক তালেবান নেতা বলেন, সব তালেবান সদস্যই জীবন দেয়ার জন্য প্রস্তুত। আল্লাহর নামে তারা কিছুতে ভয় পায় না। মার্কিনিদের অনেক অর্থ থাকলেও প্রাণ বিসর্জন দেয়ার মত সাহস নেই। আমেরিকা আর তাদের পুতুল সরকার আমার দেশকে ধ্বংস করেছে। আমার মুসলিম ভাইদের আর ইসলামকে হত্যা করেছে, আমি তাদের হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে চাই।

রাজধানী কাবুল থেকে মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বে ১৯৫০ এর দশকে বাগরাম ঘাটি তৈরি করে সোভিয়েত বাহিনী। ২০০১ সালে আফগানিস্তান অভিযান শুরুর সময় থেকেই, যুক্তরাষ্ট্র আর ন্যাটোর প্রধান ঘাঁটি হয়ে ওঠে এটি। প্রায় ৭৭ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিশাল এ ঘাটির অবকাঠামো উন্নয়নে কোটি কোটি ডলার খরচ করে পেন্টাগন। সেনাদের জন্য রাখা ছিলো ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, বাস্কেটবল কোর্ট, সুইমিং পুলসহ আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধার।

তবে, অবকাঠামো বা বিশালত্ব নয়, বিশ্বজুড়ে বাগরাম পরিচিতি পায় নিপীড়নের কারণে। অনেকেই মনে করেন, নিপীড়নের এ কৌশলে হিতে-বিপরীত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য, আফগানদের মধ্যে বেড়েছে পশ্চিমাবিদ্বেষ।

উল্লেখ্য, জুলাই’র শুরুতে রাতের আঁধারে বাগরাম ছেড়ে যায় মার্কিন সেনারা। তখনও প্রায় ৭ হাজার বন্দি ছিলো ঘাটির কারাগারে। আগস্টে, তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর যে যেভাবে পারে কারাগার থেকে বেরিয়ে যায় বন্দীরা। বাকিদের মুক্তি দেয় তালেবান।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply