মানসিক সমস্যায় ভোগা ছোট ছেলের উপরে সবসময় অত্যাচার চালাতো বড় ছেলে। দুই বেলা ঠিকঠাক খেতে পর্যন্ত দেওয়া হয় না ছোট ছেলেকে। পান থেকে চুন খসলেই বেধড়ক মারপিট করতো! এমন পরিস্থিতিতে ছোট ছেলেকে বাঁচাতেই ঘুমন্ত বড় ছেলেকে কাটারি দিয়ে কোপানোর অভিযোগ উঠেছে মায়ের বিরুদ্ধে!
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঁশদ্রোণী থানা এলাকায় মঙ্গলবার গভীর রাতে এই ঘটনায় শেষ পর্যন্ত রক্ষা পেয়েছে বড় ছেলে। পরে পুলিশ গ্রেফতার করে ওই নারীকে। বুধবার আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বলে খবর দিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা।
পুলিশ সূত্রের জানা যায়, তিরিশ বছর বয়সী আহত ওই তরুণের নাম সুরজিৎ দাস। তার বাবা প্রফুল্ল দাস পোর্ট ট্রাস্টের কর্মী ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পরে মা কাবেরী দাস এবং মানসিক সমস্যায় ভোগা এক ভাইকে নিয়ে বাঁশদ্রোণী প্লেস এলাকার বাড়িতে তিনি থাকেন।
পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে নিজের ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন সুরজিৎ। রাত দেড়টার দিকে হঠাৎ কাটারি নিয়ে ছেলের উপরে কাবেরী চড়াও হন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছেলের মাথার পিছনের দিক লক্ষ্য করে কোপাতে শুরু করেন তিনি। রক্তাক্ত অবস্থায় কোনও রকমে বাড়ি থেকে বেরিয়ে থানায় পৌঁছান সুরজিৎ।
ওই সময় থানায় কর্তব্যরত এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, হঠাৎ দেখি সম্পূর্ণ ভেজা গায়ে, রক্তাক্ত অবস্থায় এক যুবক থানায় এসে ঢুকেছেন। প্রশ্ন করায় বলেন, তার মা তাকে খুন করে ফেলবেন।
ওই যুবকের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছায় পুলিশ। সেখান থেকেই আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয় কাবেরী দাসকে। মায়ের সঙ্গেই থানায় আসে ছোট ছেলে। আহত সুরজিৎকে এর পরে পাঠানো হয় হাসপাতালে। সেখানে তার মাথায় বেশ কয়েকটি সেলাই দিতে হয়।
অভিযুক্ত কাবেরী দাস পুলিশকে জানান, তার স্বামীর মৃত্যুর পরে তাদের ফেলে মুম্বাই চলে গিয়েছিল সুরজিৎ। সেখানেই মাদকের আড্ডায় গানবাজনা করতো সে। পাড়ার এক ব্যক্তির সাহায্যে এবং স্বামীর পেনশনের টাকায় ছোট ছেলে ও তার জীবন কোনও মতে চলে যায় বলে কাবেরীর দাবি।
কিন্তু লকডাউনের মধ্যে ফিরে আসে সুরজিৎ। এর পর থেকে বাবার পেনশনের টাকা নিয়ে মায়ের সঙ্গে সে ঝগড়া করতে শুরু করে। ছোট ভাইকে মারধরের শুরুও সেই সময় থেকেই।
কাবেরী আরও জানিয়েছেন, টাকা না দিলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিতো সুরজিৎ। এতো অত্যাচার করতো যে, পুলিশে যাওয়ার সাহস পাননি কাবেরী।
কাবেরী আরও বলেন, বড় ছেলে বলতো, পুলিশে গেলেও বড়জোর দুই দিন রেখে ছেড়ে দেওয়া হবে। তার পরে ফিরে এসে ও নাকি আমাকে আর ওর ভাইকে খুন করবে। ছোট ছেলেকে বাঁচাতেই সুরজিৎকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলব বলে ঠিক করি।
থানায় গিয়ে দেখা যায়, সুরজিৎকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসা হয়েছে থানায়। পুলিশের পক্ষ থেকে মহিলাকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ছেলের মুখোমুখি বসিয়ে। কিন্তু মায়ের কাছ থেকে দূরে রাখাই যাচ্ছে না তার ছোট ছেলেকে।
ছোট ছেলে শুধু বলেছে, ‘দাদা মারে। মা কিছু করেনি।’ শেষে আদালতে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়িতে ওঠানোর সময়ে ছোট ছেলের সঙ্গেই রীতিমতো ধস্তাধস্তি হয় পুলিশের। কিছুতেই মাকে ছাড়তে চাইছিল না সে।
শেষে পুলিশের এক সদস্য বললেন, মাকে তো গ্রেফতার করা হলো, কিন্তু এখন এই ছেলের কী হবে? মা ছাড়া তো ছেলে এক মুহূর্তও থাকতে পারবে না।
মা আশ্বাস দিয়ে ছোট ছেলেকে বলেন, ‘পুলিশ কাকুদের সঙ্গে থাকো। আমি তাড়াতাড়িই ফিরবো।’
Leave a reply