সারাদেশে দাঁতের চিকিৎসায় সক্রিয় এক লাখেরও বেশি ভুয়া ডাক্তার। এদের কারোরই নেই কোনো চিকিৎসা সনদ, এমনকি নেই মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল, বিএমডিসির নিবন্ধন। এদের মধ্যে কয়েকজন ভুয়া ডাক্তারের কর্মকাণ্ড ধরা পড়েছে যমুনা নিউজের অনুসন্ধানে।
মগবাজার র্যাব অফিস পার হলেই আমবাগানে আমেনা ডেন্টাল কেয়ার। ইতোমধ্যে চিকিৎসার অপেক্ষায় রয়েছেন বেশ কয়েকজন রোগী। ভেতরে তখন এক কিশোরের দাঁতের সার্জারি করছিলেন হাতুড়ে চিকিৎসক ইকবাল। ক্যামেরা দেখেই থমকে গেলেন তিনি। দ্রুত লাইট বন্ধ করে রোগীকে অন্ধকারে ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যান নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দেয়া ওই টেকনোলজিস্ট।
চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে ইকবালের মতোই দাঁতের স্পর্শকাতর চিকিৎসা করেন মালিবাগের হেনা ডেন্টাল কেয়ারের কথিত ডাক্তার মনির। রীতিমত এলজিনেট ব্যবহার করে রোগীর দাঁতের মাপ নিচ্ছিলেন তিনি। ক্যামেরা দেখেই তিনিও ভাগিয়ে দেন রোগীকে। ধরা পড়ে নিজেকে চিকিৎসক নয় বরং টেকনোলজিস্ট হিসেবেই পরিচয় দেন মনির নামের ওই কথিত চিকিৎসক।
একইভাবে টেকনোলজিস্ট হলেও মেরুল বাড্ডার এস এস ডেন্টালের মালিক সালাম দীর্ঘদিন চিকিৎসা দিচ্ছেন সার্জন হিসেবেই।
আবার ভুয়া সনদের দায়ে গ্রেফতার হলেও থেমে নেই পোস্তগোলার সালাউদ্দিন মজুমদারের চিকিৎসা কার্যক্রম। এক্ষেত্রে আগের চেয়ে কৌশলী সে। নিজের ক্লিনিকে সনদধারী চিকিৎসকের নামও ব্যবহার করছেন। সেই চিকিৎসক সপ্তাহে ১/২ দিন বসলেও বাকি সময় এখানে ভরসা সালাউদ্দিনই।
ভুক্তভোগী দুজন রোগী জানালেন, ভুয়া ডাক্তারের চিকিৎসা নিয়ে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা। একজন জানালেন, তার দেয়া ওষুধ খেয়ে মাড়ি ফুলে যাওয়াসহ মুখে ঘা হয়ে গিয়েছে তার।
অভিযোগ রয়েছে, অদক্ষতার পাশাপাশি নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করেন এসব কথিত চিকিৎসকরা। আর বিএমডিসির নিবন্ধন ও চিকিৎসা সনদ না থাকায় ফিও কম। এতে কেবল সাধারণ মানুষ নয়, ভুক্তভোগী প্রকৃত চিকিৎসকরাও।
বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবীর বুলবুল জানালেন, বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ছাড়া চিকিৎসা করতে গিয়ে তারা মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বিএসএমএমইউর মেডিকেল অফিসার ডা. মমিনুর রহমান জানালেন আরও ভয়াবহ তথ্য, ভুয়া চিকিৎসকরা জুতায় ব্যবহার করার আঠা দিয়ে করেন দাঁতের চিকিৎসা। আর এর ফলে সাধারণ মানুষের মুখগহ্বরে ক্যানসারের মতো ভয়ানক রোগের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
ডেন্টাল সোসাইটি বলছে, দেশে ভুয়া দাঁতের চিকিৎসক ১ লাখের বেশি। প্রশাসনের জানা থাকলেও বন্ধ হয়নি অপচিকিৎসা। ডেন্টাল সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবীর বুলবুল জানালেন, স্বাস্থ্য প্রশাসনের অনাগ্রহ ও শৈথিল্যের সুযোগ নিয়েই এসব হাতুড়ে চিকিৎসার চর্চা চলছে।
বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. আবুল কাশেম বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন যদি দায়িত্বশীল আচরণ করে, তাহলেই এসব অপচিকিৎসা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
এদের দৌরাত্ম বন্ধে অনেকটা অসহায় বিএমডিসি। একে তো জনবল সংকট, পাশাপাশি তাদের নির্দেশনাও ঠিকমতো মানছে না সিভিল সার্জন ও প্রশাসন। বিএমডিসির উপ-রেজিস্ট্রার ডা. লিয়াকত হোসেন জানালেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানানোর পরেও কমানো সম্ভব হচ্ছে না ভুয়া ডাক্তারদের দৌরাত্ম।
এরইমধ্যে বিএমডিসির বৈঠকে সিভিল সার্জন, প্রশাসন ও পুলিশের সমন্বয়ে নতুনভাবে ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে সমন্বিত অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
Leave a reply