করোনাভাইরাস ২০২০ সাল থেকে আমাদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। ভাইরাসের থাবা কেড়ে নিয়েছে একের পর এক প্রাণ। কিন্তু করোনা তাদেরই বেশি ক্ষতি করেছে, যাদের কোমর্বিডিটি রয়েছে। বিশেষত যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে, তাদের সহজেই ঘায়েল করতে পেরেছে করোনা। চিকিৎসকদের কথায় হাই ব্লাড প্রেসার মহামারির থেকে কম কিছু নয়। শুধু বয়স্করা নয়, কমবয়সীরাও রীতিমতো ঘায়েল হচ্ছেন উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায়। আর তার ফলস্বরূপ কম বয়সেই হচ্ছে হার্ট অ্যাটাক!
হার্ট সুস্থ রাখার তাগিদ যে শুধু বেশি বয়সেই প্রয়োজন তাই নয়, এখন বিশ পার হলেও ধরা পড়ছে হার্টের নানারকম সমস্যা। যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট হতে হবে কম বয়স থেকেই। হার্ট সুস্থ রাখা ও ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে কী করতে হবে, তা জানিয়েছেন ডা. শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায় ও ডা. অর্পণ চক্রবর্তী। খবর এবিপি আনন্দের।
খবরে বলা হয়, ডা. শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, হার্টের কিছু কিছু সমস্যা জন্ম থেকেই হতে পারে। যেগুলি সাধারণত হার্টের অ্যানাটমিক্যাল সমস্যা। আর বড় বয়সে অ্যাকিউট করোনারি সিনড্রোমে বেশি আক্রান্ত হয় মানুষ। এই সমস্যা হঠাৎ একদিন তো হয় না। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে শরীরের ভেতর। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে হার্টের সমস্যা ধরা পড়লে কিন্তু তা সারানো যায়। কারও কারও ক্ষেত্রে হার্টের সমস্যা জিনগতভাবে এসে পড়ে শরীরে। কারও আবার উচ্চ রক্তচাপের কারণে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বাড়ে। এছাড়াও হার্টের আরও কিছু সমস্যা হতে পারে, যা পাল্টানো যায় না। ধরা পড়লে চিকিৎসা করা ছাড়া। কিন্তু কম বয়স থেকে জীবনযাত্রা কিছুটা নিয়ন্ত্রিত ও নিয়ম মাফিক হলে এড়ানো যায় হার্টের সমস্যা। যাকে লাইফস্টাইল মডিফিকেশন বলা যেতে পারে।
* শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমতে দেয়া যাবে না:
সমীক্ষায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত মোটা মানুষদের হার্টের অসুখের প্রবণতা বেশি। তাই সে বিষয়টি নজরে রাখতে হবে। অতিরিক্ত মেদ থেকে রেহাই পেতে নিয়মিত এক্সারসাইজ, কম তেল-ঝালযুক্ত খাবার খাওয়া, হালকা থেকে ভারি এক্সারসাইজ, ঘি-মাখন যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
* লবণ কম খাওয়া:
পাতের পাশে লবণ নিয়ে খেতে বসা অনেকের অভ্যাস। অনেকে আবার যে কোনো তরি-তরকারিতেই অতিরিক্ত লবণ যোগ করে খেতে পছন্দ করেন। এতে কিন্তু উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা বাড়ে। আর তাতে বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা। বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে ৬ গ্রাম লবণ খাওয়াই যথেষ্ট। আর শিশুদের ক্ষেত্রে লবণের মাত্রা প্রতিদিন ৩ গ্রাম হলে ভালো হয়। মাথায় রাখবে হবে এই হিসেব কিন্তু রান্না করা খাবারে লবণের পরিমাণ ধরেই।
* চিনি কম খান:
অতিরিক্ত চিনি খেলে ওজন বাড়ে। তাছাড়া ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা যদি চিনি খান, তাহলে তা ক্ষতিই করে।
* স্যাচুরেটেড ফ্যাট নিয়ন্ত্রণে রাখুন:
খাদ্য তালিকা থেকে যতোটা সম্ভব মাখন, ঘি, মার্জারিন, খাসির মাংস, দুগ্ধজাতীয় খাবার কমিয়ে ফেলুন। এতে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। প্রয়োজনে সেমি স্কিমড মিল্ক খেতে পারেন। মুরগির মাংস খেতে পারেন সিদ্ধ করে। তেল-ঝাল-মশলা দিয়ে রান্না করা খাবারের পরিমাণ কমান।
* পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান:
রাতের ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। রাতে টানা ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক। যদি কোনো কারণে ঘুম একান্ত কম হয়, তাহলে কাজের ফাঁকে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিন। কিন্তু মনে রাখবেন রাতে টানা ঘুম থেকে দিনের পর দিন শরীরকে বঞ্চিত করলে, তা কিন্তু পরবর্তীতে বাজেভাবে জানান দেবে।
* ধূমপান ছাড়ুন:
ধূমপান কার্ডিওভ্যাসকুলার রোগের অন্যতম অনুঘটক। যারা ধূমপান করেন তাদের হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা অন্যদের থেকে ২ গুণ বেশি।
* অ্যালকোহলের মাত্র কমান:
অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যালকোহল সেবন শরীরে উচ্চ রক্তচাপসহ আরও অনেক সমস্যা বাড়ায়। পুরোপুরি ছাড়তে না পারলেও নিয়ন্ত্রণ করুন।
* মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন:
ক্রমবর্ধমান স্ট্রেস হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বাড়ায়। তাই কর্মক্ষেত্রের টেনশন বাড়িতে আনবেন না। কোনো কারণে দীর্ঘদিন মানসিক চাপে ভুগলে সাইকোলজিস্টের সাহায্য নিন।
ইউএইচ/
Leave a reply