মহালয়ার কাহিনি

|

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব মহালয়া আজ। দেবীপক্ষের শুরুর দিনে ভোর থেকে রাজধানীর ঢাকেশ্বরীসহ দেশের অন্যান্য মন্দিরে এ উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। চণ্ডিপাঠসহ ষোড়শ উপাচারে দেবী দুর্গাকে মর্তে আহ্বান জানিয়েছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।

সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে প্রয়াত আত্মাদের পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। মূলত পৃথিবীতে প্রয়াত আত্মাদের সমাবেশকেই মহালয়া বলা হয়।

পুরাণ মতে, ব্রহ্মার বর পেয়ে মহিষাসুর অমর হয়ে উঠেছিলেন। তবে শর্ত ছিল শুধুমাত্র কোনো নারীশক্তি চাইলেই তার পতন সম্ভব। অসুরদের অত্যাচারে যখন দেবতারা অতিষ্ঠ ছিলেন, তখন ত্রিশক্তি ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর নারীশক্তি সৃষ্টি করেন। তিনিই মহামায়ারূপী দেবী দুর্গা। দেবতাদের দেওয়া অস্ত্র দিয়ে মহিষাসুরকে বধ করেন তিনি। আর তাই বিশ্বাস করা হয়, এই উৎসব অশুভ শক্তির বিনাশ করে শুভশক্তির বিজয়ের উৎসব।

মহালয়ার দিন দেবীর দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। মহালয়া শব্দটির অর্থ, মহান আলয় বা আশ্রম। এক্ষেত্রে দেবী দুর্গাই হলেন, সেই মহান আলয়। পুরাণ থেকে মহাভারত, মহালয়া ঘিরে বর্ণিত আছে নানা কাহিনি।

পুরাণ অনুসারে, কোনো মৃত মানুষের শ্রাদ্ধ করলে তার আত্মা মুক্তি লাভ করে। শ্রাদ্ধ করলে পূর্বপুরুষেরা খুশি হন এবং আশীর্বাদ করেন বলে বিশ্বাস করা হয়। রামায়ণ অনুসারে রাম দেবী দুর্গার অকাল বোধন করেছিলেন। কথিত আছে রাম মহালয়ার দিন পিতৃ তর্পণ করেছিলেন। মহাভারত অনুসারে, স্বর্গে বসবাস করার সময় কর্ণের আত্মাকে খাবার হিসাবে শুধু সোনা ও রত্ন দেওয়া হয়। কারণ দাতা হিসাবে তিনি কখনও পিতৃপুরুষকে অন্য খাবার দেননি, সকলকে সোনা-রত্ন দান করেছেন। আসলে কর্ণ প্রথমে তার পিতৃপরিচয় জানতেন না। যুদ্ধের আগের রাতে কুন্তীর থেকে তিনি জানতে পারেন তার পিতৃপরিচয়। এছাড়া পুরাণে আছে, দেবরাজ ইন্দ্রকে ১৬ দিনের জন্য মর্তে গিয়ে তর্পণ করতে পাঠান যমরাজ। আর এই ১৬ দিনই পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত হয় এবং সেই সময় থেকেই মহালয়ার দিন এবং তার আগে ১৫ দিন পিতৃপুরুষদের জলদান করা হয়।

এবারের মহালয়া উপলক্ষে আগামীকাল ভোর থেকে পূজা উপলক্ষে শুরু হবে ঢাকাসহ সারাদশে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য মন্দিরেও এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মহালয়ার ছয় দিন পর ১১ অক্টোবরই দশভুজা দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। ১২ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ১৩ অক্টোবর মহা অষ্টমী এবং ১৪ অক্টোবর মহানবমী শেষে ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের দুর্গোৎসব। করোনার কারণে জনসমাগম এড়াতে এবার প্রায় কোথাওই হচ্ছে না কুমারী পূজার আয়োজন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply