রাস্তায় সন্তান প্রসব মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর, ইউএনও নাম রাখলেন প্রিয়ন্তী

|

রাস্তার পাশে জন্ম নেয়া প্রিয়ন্তীকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন শ্রীনগরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণব কুমার ঘোষ।

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি:

হঠাৎই প্রসব ব্যথা, এক পর্যায়ে রাস্তার পাশেই সন্তান প্রসব করলেন উদ্বাস্তু মানসিক ভারসাম্যহীন সাহেলা (৩০)। তার কোল আলো করে জন্ম নিলো ফুটফুটে এক কন্যা শিশু। কিন্তু, সদ্য জন্ম নেয়া শিশুকে নিয়ে যাবেন কোথায়! ঠিক এ স্ময়ই স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর শুনে ওই সাহেলা ও তার শিশুকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার ব্যবস্থা করেন স্থানীয় ইউএনও মহোদয়।

শনিবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ছনবাড়ী এলাকায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের আন্ডারপাস সড়কে এ ঘটনা ঘটে।

সদ্য ভূমিষ্ট শিশুর কান্না শুনে যখন সাহেলার চারপাশে উৎসুক জনতার ভিড়, তখন জড়ো হওয়া লোকজনের দিকে বারবার নিরুপায় করুণ চোখে তাকাচ্ছিলেন সাহেলা। কারণ, সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানকে নিয়ে যাওয়ার জায়গা নেই তার। উদ্বাস্তু ও কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন সাহেলার নেই কোনো স্বজন, কিংবা পরিবার। এমন অবস্থায় একবার সদ্য ভূমিষ্ঠ কন্যা আর পাশে জড়ো হওয়া উৎসুক জনতার দিকে বারবার তাকাচ্ছিলেন সাহেলা।

এর মধ্যেই নেমে এসেছে সন্ধ্যা। অন্ধকার নামছে চারদিকে, তবে পুরোপুরি অন্ধকার নামার আগেই নিরুপায় সাহেলার জন্য দেখা দিলো আশার আলো!

স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর শুনে নবজাতিকা ও সাহেলার পাশে দাঁড়ালো উপজেলা প্রশাসন। রাস্তা থেকে মা ও শিশুকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন স্থানীয় ইউএনও। শেষ পর্যন্ত শিশুকে নিয়ে রাস্তায় আর থাকতে হয়নি সাহেলাকে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন ও উদ্বাস্তু সাহেলা স্থানীয় ছনবাড়ি ও শ্রীনগরের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ঘোরাঘুরি করতো। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ তার প্রসব ব্যথা উঠলে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ছনবাড়ি আন্ডারপাস সড়কে নিজে নিজেই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। এ সময় সড়কে উৎসুক জনতা সাহেলাকে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসলেও কারো কথাই শুনছিলো না সে।

স্থানীয়রা বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানালে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণব কুমার ঘোষ। পরে সমাজসেবা ও ফায়ারসার্ভিসকে খবর দিয়ে শিশু ও মাকে রাস্তা থেকে উদ্ধার করে রাত সাড়ে ৮টার দিকে ভর্তি করান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। উপজেলা প্রশাসন থেকে সরবরাহ করা হয় প্রয়োজনীয় খাদ্য ও কাপড়। বর্তমানে মা ও শিশু সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণব কুমার ঘোষ।

শ্রীনগরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণব কুমার ঘোষ জানান, সন্ধ্যায় স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে মানবিকতা ও দায়িত্ববোধ থেকেই মা-শিশুর পাশে দাঁড়ায় উপজেলা প্রশাসন। ভর্তির পর এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে আছে মা ও শিশু । মা ও নবজাতিকার জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে। ভূমিষ্ট হওয়া শিশুটির নাম রেখেছি ‘প্রিয়ন্তী’।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply