প্রাকৃতিকভাবে নয়, যদি গবেষণাগারে উৎপাদিত হয় খাদ্য? বিভিন্ন দেশে তেমন চেষ্টাই করছেন বিজ্ঞানীরা। কিছু ক্ষেত্রে সফলও হয়েছেন। কিছু আছে পরীক্ষার পর্যায়ে। এই যেমন সেলুলার অ্যাগ্রিকালচার পদ্ধতিতে ল্যাবরেটরিতেই কফি তৈরি করেছেন ফিনল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা। আর থ্রিডি প্রিন্টার ব্যবহার করে গরুর মাংস তৈরির শেষ ধাপে আছেন জাপানের একদল গবেষক। বিজ্ঞানীরা বলছেন, গবেষণাগারে খাদ্য তৈরি হলে কমবে পরিবেশ দূষণ। বাড়বে উৎপাদনও।
বিশ্বজুড়ে কফির উচ্চ চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন হয়ে উঠেছে বড় চ্যালেঞ্জ। যার প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। উচ্চ তাপমাত্রা, খরা আবার বৃষ্টির আধিক্যে বিশ্বজুড়েই সমস্যার মুখে কফি চাষিরা। আর এই সমস্যা সমাধানে কার্যকরী এক উপায় বের করেছেন ফিনল্যান্ডের গবেষকরা।
সেলুলার কৃষি পদ্ধতিতে বায়ো-রিঅ্যাক্টরে কফি উৎপাদন করছেন তারা। কফি গাছের সেল থেকে গবেষণাগারেই তৈরি হচ্ছে বীজ।
ভিটিটি রিসার্চ সেন্টারের দলনেতা হেইকো রিসচার বলেন, চাষের বদলে প্ল্যান্ট সেল কালচার পদ্ধতি ব্যবহার করছি। অর্থাৎ সত্যিকারের কফি সেল ব্যবহার হবে। তবে তা মাঠে চাষ হবে না। বায়ো রিঅ্যাক্টরের মাধ্যমে উৎপাদন হবে।
গবেষকরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য উৎপাদনের বিকল্প এক পদ্ধতি হতে পারে এটি। পরিবেশ সুরক্ষায়ও হবে উপকারী।
হেইকো রিসচার আরও বলেন, আরও টেকসই উপায়ের সন্ধানেই এই পদ্ধতি। ল্যাবে উৎপাদনের নানা সুবিধা আছে। বায়ো-রিঅ্যাক্টর কালটিভেশনে খুব একটা সার বা কীটনাশক প্রয়োজন হবে না। তাই পরিবেশ দূষণ হবে না। পরিবহন ব্যয়ও কমে যাবে। তাছাড়া নির্দিষ্ট ঋতু বা আবহাওয়ার বিষয়ও নেই।
তবে স্বাদ আর গন্ধ কি আসল কফির মতোই হবে? ভিন্ন ভিন্ন ফ্লেভারের কফির সাথে প্রতিযোগিতায় কি টিকবে? মানুষই বা কেন কিনবে কৃত্রিমভাবে তৈরি কফি?
ভিটিটি রিসার্চ সেন্টারের গবেষক হেইকি আইসালা বলেন, শতভাগ হয়তো হবে না। বাজারের মতো স্বাদের বৈচিত্র্যও সম্ভব হয়নি। বরং বলা যায়, এটা ভিন্ন ভিন্ন বেশ কয়েক ধরনের কফির সমন্বয়। তবে হ্যাঁ কফির চাহিদা নিশ্চয়ই পূরণ করবে।
জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন, কৃত্রিম উপায়ে গরুর মাংস তৈরির। ব্ল্যাক কাউ প্রজাতির গরুর সেল দিয়ে থ্রিডি বায়োপ্রিন্টারের মাধ্যমে আলাদা আলাদাভাবে মাংস, রক্ত নালী আর মোটা ফাইবার তৈরি করেছেন। ফাইবারগুলো এক করে তৈরি করেছেন মাংসের কিমা। অবশ্য এখনও পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত নয় এই মাংস। তাই স্বাদ সম্পর্কেও বলা যাচ্ছে না।
ওসাকা ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক মিশিয়া মাৎসুসাকি বলছেন, মাংস, চর্বি আর রক্তনালীকে একটি ফাইবার ফর্মে প্রিন্ট করি। অল্প কিছু সেল থেকে যদি প্রচুর মাংস তৈরি করা যায়, ভবিষ্যতে খাবার আর প্রোটিনের স্বল্পতা মোকাবেলা করা যাবে।
এক ঘন সেন্টিমিটার মাংস তৈরিতে সময় লাগে চার সপ্তাহ পর্যন্ত। প্রতি গ্রামে খরচ হয় ৮৯ ডলারের মতো। তবে পরবর্তীতে ব্যয় আরও কমে আসবে বলে প্রত্যাশা।
Leave a reply