সারাদিন পরিশ্রম করে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েও ঘুমের দেখা পান না অনেকে। এপাশ ওপাশ করে সময় কেটে যাচ্ছে কিন্তু ঘুম নেই চোখে। এজন্য আগেভাগেই শুয়ে পড়েছেন। টিভি/মোবাইল বন্ধ করেছেন, ঘরের আলো বন্ধ করে শুয়ে আছেন। কিন্তু ঘুম নেই। কিছুক্ষণ পর ঘুমের ওপর বিরক্ত হয়ে মেজাজটাই আর ধরে রাখতে পারছেন না অনেকে। জেনে নেই কৌশল, কিভাবে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ঘুমিয়ে যাবেন। লিখেছেন-তালহা বিন জসিম।
কালকের সব পরিকল্পনা লিখে ফেলুন:
ধরুন, কাল আপনার অনেকগুলো কাজ করতে হবে এজন্য আপনার খুব সকালে উঠতে হবে। আর ঘুমের সময় এটাই মাথায় ঘুরছে কিভাবে কাজগুলো করবেন, সকালে উঠতে পারবেন কিনা এটা নিয়েও চিন্তিত। পুরো দিনের কাজের তালিকা আপনার মাথায় ঘুরতে থাকে আর দুশ্চিন্তা বাড়তে থাকে। আসলে এ রকম অবস্থায় আপনার মস্তিষ্ক উত্তেজিত হয়ে থাকে তাই ঘুম আসে না। এজন্য কাল কি কি কাজ করতে হবে তা লিখে ফেলুন। এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তালিকা করে ফেলুন। সাথে সাথে কিভাবে করবেন তারও পরিকল্পনা লিখে রাখুন। এতে করে আপনার মস্তিষ্ক শিথিল হবে। এক ধরণের অনুভূতি আসবে যে, সব গোছানো আছে কাল উঠেই পরিকল্পনামাফিক কাজ করলেই হবে। আপনার উদ্বেগ কমিয়ে আপনাকে দিবে মানসিক শান্তি। আর এভাবে আপনার শরীর ঘুমের জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠবে।
তালিকা যত নিখুতভাবে লিখতে পারবেন তত তাড়াতাড়ি ঘুমুতে পারবেন।
বড় বড় শ্বাস নিন:
শ্বাস নেয়ার নমুনা আমাদের স্নায়ু ব্যবস্থার ওপর ভূমিকা রাখে। এর ওপর আমাদের হৃদকম্পন, শিথিলতা ও উত্তেজনা নির্ভর করে। দ্রুত শ্বাস নেয়া যেমন উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয় তেমনি ধীরে ধীরে শ্বাস নেয়া আমাদের শান্ত করে।
তাই ঘুমের জন্য দরকার মস্তিষ্কে পরিমাণমতো অক্সিজেন পৌঁছানোর। মুখ বন্ধ করে চার গুনতে থাকা পর্যন্ত নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিন, তারপর সাত গুনতে থাকা পর্যন্ত ধরে থাকুন। তার আস্তে আস্তে মুখ দিয়ে ‘হুশশ’ শব্দ করে শ্বাস ছাড়ুন আট পর্যন্ত গুনতে গুনতে। এভাবে ৪ বার করুন।
গুহা মানব হয়ে যান:
গুহায় যেমন অন্ধকার ও ঠাণ্ডা থাকে। আপনার ঘুমের ঘরটিও তেমনি অন্ধকার ও ঠাণ্ডা করুন। দেখবেন তাড়াতাড়ি ঘুম আসছে। এজন্য টেলিভিশন, ল্যাপটপ, মোবাইল, যত যান্ত্রিক বস্তু আছে সব বন্ধ করে দিন। ঘরের আবহাওয়া ঠাণ্ডা রাখুন। কোন আলো না থাকে এমন ব্যবস্থা করুন। গবেষণায় দেখা গেছে, ঠাণ্ডা আবহাওয়া দ্রুত ঘুমের জন্য শরীর-মন তৈরি করে দেয়। এর কারণ হলো এ ধরণের আবহাওয়া আমাদের শরীরের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয়। শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখার জন্য ঘুমের এক ঘণ্টা আগে গোসল করতে পারেন।
মস্তিষ্ককে উল্টা বুঝান:
অনেক সময় দেখা গেছে আপনি ঘুমুতে চাচ্ছেন। কিন্তু ঘুম আসছে না। তাই এটা নিয়ে যত চিন্তা করবেন ততই ঘুম হারাম হয়ে যাবে। কারণ ঘুম না আসার চিন্তা আপনার মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়। তাই মস্তিষ্ককে উল্টা বোঝান। এটাকে বলে ‘স্লিপ প্যারডক্স’। কেনো ঘুম আসছে না এটা নিয়ে মস্তিষ্ককে চিন্তা করার সুযোগ না দিয়ে অন্য কোন বিষয়ের ওপর চিন্তা পরিবর্তন করুন। বলুন আপনি এখন ঘুমুতে যাচ্ছেন না বরং জেগে থাকবেন। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকুন। অন্যকিছু কল্পনা করুন। এ সময় হালকা মিউজিক শুনতে পারেন। পেশি শিথিল করে এমন কিছু করেন। নেতিবাচক চিন্তা পরিহার করে দিনে সেরা ভালো কয়েকটি কাজের কল্পনা করুন।
গরম দুধ/রাতের খাবার :
ঘুমুনোর আগে এক গ্লাস গরম দুধ খেতে পারেন। এতে করে শরীরে ট্রিপটোফেন বেড়ে যায় যার কারণে ঘুম সহজে আসে। দুপুরের পর তেতো খাবার খাবেন না। রাতের খাবার তাড়াতাড়ি খেয়ে নিবেন। ঘুমের কমপক্ষে ২ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খাবেন। রাতে যত বেশি খাবেন তত হজমের সমস্যা করবে যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
Leave a reply