রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহ হত্যাকারীদের গ্রেফতারের পর হত্যা রহস্যও উন্মোচন করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন (এপিবিএন)। গত ২৯ সেপ্টেম্বর সাড়ে ৮টায় আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (ARSPH) নেতা মাস্টার মহিবুল্লাহ দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন। ঘটনার পরপরই ১৪ এপিবিএন পুলিশ ছায়াতদন্ত পরিচালনা করে আসছিলো।
আজ শনিবার (২৩ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে মহিউদ্দিন হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন নিয়ে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান ১৪ এপিবিএন এর অধিনায়ক নাইমুল হক।
অধিনায়ক নাইমুল হক জানান, এপিবিএন ইতোমধ্যে ৪ জন সন্দেহভাজন আসামিকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে একজন মো. ইলিয়াস, সে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। অন্যান্য আসামিদের মধ্যে কিলিং মিশনে অংশ নেয়া আজিজুল হককে আজ (২৩ অক্টোবর) ভোর ৪ টায় লাম্বাশিয়া পুলিশ ক্যাম্পের অধীন লোহার ব্রীজ এলাকা থেকে ১টি ওয়ান শুটারগান এবং ১ রাউন্ড বুলেটসহ গ্রেফতার করা হয়। তার দেয়া তথ্যেই অন্য ৩ আসামি মো. রশিদ মুরশিদ আমিন, মো. আনাছ , ও নূর মোহাম্মদকে গ্রেফতার করা হয়।
মহিবুল্লাহ কিলিং মিশনে অংশ নেয়া ধৃত আসামি আজিজুল হক জিজ্ঞাসাবাদে জানায় , মাস্টার মহিবুল্লাহকে হত্যার দুই দিন আগে অর্থাৎ ২৭ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ১০টায় লাম্বাশিয়া মরকজ পাহাড়ে একটি মিটিং হয়। ওই মিটিংয়ে কিলিং মিশনে অংশ নেয়া আসামি আজিজুল হকসহ আরও ৪ জন উপস্থিত ছিল। তথাকথিত দুর্বৃত্তদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ মহিবুল্লাহকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছে মর্মে মিটিংয়ে আলোচনা হয়। হত্যার কারণ হিসেবে বলা হয় যে, মাস্টার মহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের বড় নেতা হয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত কার্যক্রমে বিশেষ ভূমিকা থাকায় দিনদিন আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়ে উঠেছেন মুহিবুল্লাহ, তাকে থামাতে হবে। পরবর্তীতে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী এশার নামাজের পর মাস্টার মহিবুল্লাহ তার শেডে ফিরে গেলে আসামি মুরশিদ আমিন মহিবুল্লাহকে শেডের বাইরে ডেকে নিয়ে প্রত্যাবাসন বিষয়ে কথা বলে, এবং কিছু লোক তার সাথে কথা বলবে বলে অফিসে ডেকে নিয়ে যায়। অফিসে যাওয়ার পথে মুখোশধারী ৭ ব্যক্তি তাদেরকে ফলো করছিলো বলে জানা গেছে। এরপর, মহিবুল্লাহ নিজ অফিসে অবস্থান করছে, এ তথ্য আনাছ ও নূর মোহাম্মদকে নিশ্চিত করে অফিস এলাকা দ্রুত ত্যাগ করে মুরশিদ আমিন। এ দুজনই মাস্টার মহিবুল্লাহকে হত্যা করতে হত্যাকারীদেরকে ঘটনাস্থলে আসার সংকেত দেয়।
দুর্বৃত্তের দলটি ডব্লিউসিআইসি অফিসের পাশে আরটিসিসি অফিস সংলগ্ন সি ব্লকের ভেতরের চিকন গলি ব্যবহার করে স্থানীয় একটি পেঁপে বাগানের দিকে একটি শেডে আগে থেকেই অবস্থান করছিল। আনাছ ও নূর মোহাম্মদের সংকেত পাওয়ার পর আগে থেকেই অবস্থান নেয়া দুর্বৃত্তের দলটি ক্যাম্প ১ এর ব্লকের রাস্তা ব্যবহার করে মহিবুল্লাহ’র অফিসে চলে আসে। দুর্বৃত্তদের মধ্যে ৩ অস্ত্রধারী মহিবুল্লাহর অফিস কক্ষে প্রবেশ করে। আনাছ, নূর মোহাম্মদ, আজিজুল হক ও অপর একজন অস্ত্রধারীসহ মোট ৪ জন মহিবুল্লাহ’র অফিস কক্ষের প্রবেশ দরজায় অবস্থান নেয়।
হত্যাকাণ্ডের সময় মহিবুল্লাহ ১০-১৫ জন লোকসহ তার অফিস রুমেই বসেছিলেন। এ সময় অফিস কক্ষে প্রবেশকারী অস্ত্রধারীদের একজন মাস্টার মহিবুল্লাহকে বলেন, মহিবুল্লাহ উঠ। মহিবুল্লাহ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালে ৩ দূর্বৃত্ত মিলে মোট ৪ রাউন্ড গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মহিবুল্লাহ লুটিয়ে পড়ে।
হত্যাকাণ্ডের পর ৩ আসামি মহিবুল্লাহর অফিস সংলগ্ন পেছনের রাস্তা দিয়ে পেঁপে বাগান হয়ে পালিয়ে যায়। হত্যাকাণ্ডের পরে দৃর্বৃত্তরা পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে চলে যায় এবং সকলেই নিজ নিজ মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেয়। উল্লেখ্য, মূল কিলিং স্কোয়াডে অস্ত্রধারী ছিল ৫ জন।
উক্ত হত্যাকাণ্ডের পরপরই এপিবিএন পুলিশ রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত আসামিদের গ্রেফতার করে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা এবং মাস্টার মহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত অন্যান্য দুষ্কৃতিকারীদের আইনের আওতায় আনার জন্য এপিবিএন এর অভিযান কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানিয়েছে এপিবিএন।
/এসএইচ
Leave a reply