দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় জড়িত ও নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানিয়েছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। ট্রাইব্যুনাল গঠনসহ আট দফা দাবির সাথে সাথে ঘোষণা করা হয়েছে তিন দফা কর্মসূচিও।
এর আগে শনিবার (২৩ অক্টোবর) শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সকাল ছয়টা থেকে শুরু হয় হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পূর্বঘোষিত গণ অনশন, গণ অবস্থান ও বিক্ষোভ মিছিল। এতে সংহতি জানিয়ে অবস্থান নেয় বিভিন্ন সংগঠন। অবরোধ হয় শাহবাগ মোড়।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির পানি পান করিয়ে আন্দোলনকারীদের অনশন ভাঙান। পরে আয়োজকরা বিক্ষোভ মিছিল বের শাহবাগ মোড় ছেড়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের দিকে পদযাত্রা করেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হন অবরোধকারীরাও। বেলা ১২টায় শেষ হয় কর্মসূচিটি।
‘গণঅনশন ও গণঅবস্থান’ কর্মসূচি শেষ করার আগে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ সংগঠনের পক্ষে আট দফা দাবি উত্থাপন করেন।
দাবিতে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত সব মন্দির, বাড়িঘর পুনর্নির্মাণ, গৃহহীনদের পুনর্বাসন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান ছাড়াও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও নিহতদের প্রতিটি পরিবারকে ন্যুনতম ২০ লাখ টাকা প্রদান অথবা প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের একজনকে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দিতে হবে।
ঘটনার বস্তুনিষ্ঠ নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক হামলাকারী ও তাদের পেছনে থাকা চক্রান্তকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করার দাবি জানানো হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে।
বলা হয়, বিশেষ ক্ষমতা আইন, সন্ত্রাস দমন আইনের আওতায় এনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুততম সময়ে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এমনকি প্রশাসনিক গাফেলতির প্রত্যেকটি অভিযোগ খতিয়ে দেখার দাবিও জানান তারা।
২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত সংগঠিত সাম্প্রদায়িক ঘটনাবলি তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনায় গঠিত সাহাবুদ্দিন কমিশনের সুপারিশ সম্বলিত রিপোর্ট অনতিবিলম্বে জনসমুক্ষে প্রকাশ ও এর সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করারও দাবি তুলেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
এছাড়াও ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন আইনের দ্রুত বাস্তবায়নসহ ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে প্রদত্ত অঙ্গিকার দ্রুত বাস্তবায়ন করার দাবি জানানো হয়েছে।
এরপরই আসে তিন দফা কর্মসূচির ঘোষণা। আট দফার অগ্রগতি বিচারপূর্বক আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে থেকে ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ শ্লোগানের সাথে ঢাকায় সমবেত হয়ে হবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা।
এছাড়া সংখ্যালঘুদের সবধরনের সংগঠন পৃথক পৃথকভাবে কর্মসূচি দেবে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কর্তৃক ৫ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া শ্যামাপূজায় দীপাবলি উৎসব বর্জন, সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১৫ মিনিট পর্যন্ত কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে নিজ নিজ এলাকার মন্দিরে নীরবতা পালন এবং মন্দির বা মণ্ডপ ফটকে কালো কাপড়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বিরোধী স্লোগান সম্বলিত ব্যানার টানানোর কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানানো হয়।
কর্মসূচিতে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন), বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাসংঘ, বাংলাদেশ সনাতন কল্যাণ জোট, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি),বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতি, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি, বাংলাদেশ মাইনরিটি সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ হিন্দু লীগ, মাইনরিটি রাইটস ফোরামের বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু ফোরাম ও হিন্দু ছাত্র ফোরাম, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংরক্ষণ সমিতি, ইন্টারন্যাশনাল শ্রী শ্রী হরি গুরুচাঁদ মতুয়া মিশন, বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ সংহতি জানিয়ে অংশ নেয়।
Leave a reply