স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রংপুর:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পবিত্র কাবা শরীফ নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দেয়ার জের নিয়ে রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার মূল হোতা কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতা সৈকত মণ্ডল ও তার সহযোগী রবিউল ইসলাম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
অন্যদিকে এ ঘটনায় তিন দিনের রিমান্ড শেষে ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগের মামলায় ৩৭ জনকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে মহানগর ছাত্রলীগ।
র্যাবের দায়েরকৃত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পীরগঞ্জ থানার এসআই সুদীপ্ত শাহীন জানান, রোববার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রংপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-২ এর বিচারক দেলওয়ার হোসেনের নিকট সৈকত মণ্ডল ও রবিউল ইসলামকে হাজির করা হয়। সেখানে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে ঘটনার আদ্যোপান্ত বর্ণনা দিয়েছে তারা।
এছাড়াও পীরগঞ্জে ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগের মামলায় রিমান্ডে থাকা ৩৭ আসামিকে ৩ দিনের রিমান্ড শেষে একই আদালতে তোলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পীরগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান। আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে আদালতে পাঠানোর আদেশ দেন।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার টঙ্গি থেকে ছাত্রলীগ নেতা সৈকত মণ্ডল ও রবিউলকে গ্রেফতার করে র্যাব। সৈকত মণ্ডলকে গ্রেফতারের পর কারমাইকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগ তাকে সংগঠন থেকা অব্যাহতি দিয়েছে। এরপর রোববার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে রংপুর মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে।
শনিবার (২৩ অক্টোবর) ঢাকায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব জানিয়েছে রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগে সৈকত মণ্ডল (২৪) নামের এক শিক্ষার্থী নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পরিতোষ সরকারের দেয়া পোস্ট ফেসবুকে শেয়ার করে বিভিন্ন ধরনের উসকানিমূলক মন্তব্য এবং মিথ্যা পোস্টের মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে স্থানীয় লোকজনকে উত্তেজিত করে সৈকত। ঘটনার দিন একটি মসজিদ থেকে মাইকিংয়ের মাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে স্থানীয় লোকজনকে জড়ো করে তার সহযোগী রবিউল ইসলাম (৩৬)। এরপরই হামলা চালানো হয়।
র্যাব আরও জানায়, পীরগঞ্জের বড় করিমপুরে পরিতোষ সরকার ও উজ্জ্বল নামের দুই তরুণের মধ্যে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ছিল। এর জের ধরে পরিতোষের ধর্ম নিয়ে উজ্জ্বল কটূক্তি করে। পরে পরিতোষ ফেসবুক মেসেঞ্জারে উজ্জ্বলের ধর্ম নিয়ে পাল্টা মন্তব্য করে। পরিতোষের ওই মন্তব্য ফেসবুকে পোস্ট করেন উজ্জ্বল। উজ্জ্বলের ওই পোস্ট সৈকত মণ্ডল নিজের ফেসবুক পেইজে ছড়িয়ে দেয়। কুমিল্লার ঘটনার পর থেকেই সৈকত নানা উসকানিমূলক পোস্ট দিচ্ছিল। পরিতোষ ও উজ্জ্বলের দ্বন্দ্বের ঘটনাকে সুযোগ হিসেবে নিয়েছিলেন সৈকত।
র্যাব আরও জানায়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে একটি ‘দুর্বল সময়ের’ জন্য অপেক্ষা করছিল সৈকত। পরিতোষের বার্তাকে কেন্দ্র করে সৈকত উসকানি ছড়ানোর পাশাপাশি নেতৃত্ব দিয়ে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছেন।
গত ১৭ অক্টোবর রাতে রংপুরের পীরগঞ্জে ফেসবুকে কাবাঘর অবমাননাকর পোস্ট দেয়াকে ঘিরে বেশ কিছু বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা।
Leave a reply