বলতে পারেন পৃথিবী কবে ধ্বংস হবে? এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জন ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। করেছেন বাবা ভ্যাঙ্গাও। বলেছেন, ৩৭৯৭ সাল নাগাদ পৃথিবীর ধ্বংস অনিবার্য। কিন্তু, ততদিনে মানুষ এক নক্ষত্রলোকের সন্ধান পাবে। সেই স্থানেই গড়ে উঠবে পৃথিবীর উপনিবেশ। শুধু পৃথিবীর ধ্বংসের মতো জনপ্রিয় ভবিষ্যদ্বাণী করেই ক্ষ্যান্ত দেননি তিনি। বরং চীনের উত্থান, আমেরিকার পতন, টুইন টাওয়ার হামলাসহ নানা বিষয়ে নাকি অদ্ভুতভাবে মিলে যাওয়া সব অনুমান করে গেছেন। প্রশ্ন জাগতে পারে কে এই বাবা ভ্যাঙ্গা?
বাবা ভ্যাঙ্গা বুলগেরিয়ার বাসিন্দা ছিলেন। যার আসল নাম ভ্যাঙ্গেলিয়া প্যানদেভা দিমিত্রোভা। থট রিডিং, অলৌকিক উপায়ে রোগ নিরাময় ইত্যাদি বিষয়ে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। তাকে ‘অলৌকিক ক্ষমতাধর’ বলে মনে করতো সে সংখ্যা নেহায়েত কম ছিল না। ১৯১১ সালে জন্ম ভ্যাঙ্গেলিয়ার। আর দশটা শিশুর মতো কাটছিলো তার শৈশব। হঠাৎই এক ঘূর্ণিঝড় এসে সব ওলট-পালট করে দেয়।
ভ্যাঙ্গেলিয়া স্বয়ং জানিয়েছিলেন, ঝড় তাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে তাকে পাওয়া যায়। চেতনা ফেরার পর তিনি টের পান, তার চোখে কোনো সমস্যা হয়েছে। ক্রমে তিনি সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি হারান।
১৯২৫ সালে ভ্যাঙ্গা দৃষ্টিহীনদের জন্য এক বিশেষ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন বাবা ভ্যাঙ্গা। সেখানে পিয়ানো বাজানো, রান্না করা, উল বোনা ইত্যাদিও শেখেন। এই সময় থেকেই তার মধ্যে অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার উদয় দেখা দেয়া বলে অনেকে মনে করেন। তিনি ভবিষ্যতে ঘটবে এমন ঘটনার কথা অবলীলায় বলতে থাকেন। খ্যাতি পান ‘বলকানের নস্ত্রাদামুস’ হিসেবে।
ধীরে ধীরে বাবা ভাঙ্গার কথা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বুলগেরিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির বেশ কয়েকজন নেতার উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেন তিনি। অবশ্য বাবা ভ্যাঙ্গার বিরুদ্ধে অভিযোগেরও কমতি নেই। অভিযোগ ওঠে, বুলগেরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে বিভিন্ন গোপন তথ্য সংগ্রহ করে তা দিয়ে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতেন ভ্যাঙ্গা। ১৯৯৬ সালে মারা যান ভ্যাঙ্গা। তখন তার বয়স ৮৫ বছর।
বাবা ভাঙ্গার বিখ্যাত সব ভবিষ্যদ্বাণী
৫০ বছরের পেশাজীবনে শতাধিক ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন বাবা ভ্যাঙ্গা। তিনি বলেন, একধরনের অদৃশ্য প্রাণীর উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারেন তিনি। আর এই প্রাণীরাই মানুষ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দেয়। যেটিকে হাস্যকর বলে অভিহিত করেছেন অনেকে।
বাবা ভ্যাঙ্গা অনুসারীরা জানান, বৈশ্বিক উষ্ণতার বিষয়ে আগেই সতর্ক করেছিলেন তিনি। ২০০৪ সালে সুনামির আগে তিনি বলেছিলেন, ঠাণ্ডা অঞ্চল উষ্ণ হয়ে উঠবে এবং আগ্নেয়গিরি জাগ্রত হবে।
এমনকি নাইন-ইলেভেনে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে টুইন টাওয়ার হামলার বিষয়েও ভবিষ্যদ্বাণী ছিল বাবা ভ্যাঙ্গা। তিনি বলেন, ভয়, ভয়! লোহার পাখির আক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইয়েরা ভেঙে পড়বে। দুটি নেকড়ের গর্জনে নিরীহদের রক্ত ঝরবে।
এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট যে একজন আফ্রিকান-আমেরিকান হবেন সেটিও আগে থেকেই বলেছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে এটাও বলেছিলেন যে, তিনিই হবেন শেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এটি দেখে হয়তো গর্জন করে উঠবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ভ্যাঙ্গা যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করেছিলেন তার মধ্যে অনেক ঘটনাই মিলে মিলে গেছে। তার কিছু আলোচিত ভবিষ্যদ্বাণী তুলে ধরা হল:
বিশ্ব রাজনীতিতে চীনের প্রবল উত্থানের কথা বলেছেন ভ্যাঙ্গা। সেই সঙ্গে জানিয়েছিলেন, চীন শুক্রগ্রহে নতুন কোনও শক্তির উৎস খুঁজে বের করবে।
২০১৮ সালের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সংকটের মধ্যে পড়বে।
২০২৮ সালে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট দেখা দেবে।
ভ্যাঙ্গার মতে, ২০১৬ সাল থেকে ইউরোপের অবলোপ ঘটবে। (ব্রেক্সিটের কথা মাথায় রাখলে এ কথা অস্বীকার করা যাবে না।)
ইসলামি শক্তির দ্বারা ইউরোপ বিপন্ন হয়ে পড়বে। সিরিয়ায় ইসলামি শক্তিগুলো বিপুল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে।
২০৪৩ নাগাদ রোম একটি মুসলিম নগরীতে পরিণত হবে। সেখানে প্রতিষ্ঠিত হবে খিলাফতের শাসন।
২১৩০ সাল নাগাদ মানুষ পানির তলায় বসবাসের বন্দোবস্ত করে ফেলবে।
২০৪৫ সাল নাগাদ বিশাল হিমশৈলগুলো গলতে শুরু করবে। পৃথিবীর অস্তিত্ব সংকট দেখা দেবে।
২০৭৬ সাল নাগাদ ইউরোপে কমিউনিজম আবার মাথাচাড়া দেবে এবং তার প্রভাব পড়বে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও।
২১৩০ সালের মধ্যে ভিনগ্রহের প্রাণী বা এলিয়েনরা পানির নিচে সভ্যতা তৈরি করতে সাহায্য করবে।
সেই সঙ্গে ৩০০৫ সালে মঙ্গল গ্রহে একটি যুদ্ধ হবে বলেও বাণী দিয়েছেন তিনি।
যমুনা অনলাইন: টিএফ
Leave a reply