১৯৯২ বিশ্বকাপে সেই যে আন্ডারডগের তকমা সেঁটে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ডের গায়ে, তা এখনও মুছে যায়নি। বরং বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে খেলতে আসা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছেও এই তকমা নিয়েই খুশি হবারই কথা কেন উইলিয়ামসনের দলের। তারা আদতে আন্ডারডগ হোক বা না হোক, এই তকমা যে বেশ ভালোভাবেই তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
বৈশ্বিক কোনো আসরে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের লড়াই মানেই অবধারিতভাবে চলে আসবে বিশ্বকাপ ফাইনালের ইতিহাসেই অন্যতম পাগলাটে ম্যাচের কথা; ২০১৯ সালের লর্ডসে বেন স্টোকসের বীরত্ব, সুপার ওভারে মার্টিন গাপটিলের রান আউট হওয়া এবং বাউন্ডারির ভিত্তিতে শিরোপা নির্ধারণের চূড়ান্ত নাটক। উভয় দলই বলছে, লর্ডসের সেই ম্যাচের ছায়া তাদের উপর আছে সামান্যই। ভিন্ন কন্ডিশন, ভিন্ন ফরম্যাট, ভিন্ন টুর্নামেন্টের ভিন্ন স্তরে দুই একাদশও থাকছে অনেকটাই ভিন্ন। তবে সেই বিশ্বকাপের সাথে এই আসরের কিছু মিলও বেশ মজার। নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে ভারত বিদায় নিয়েছিল ২০১৯ বিশ্বকাপে। এউইন মরগ্যান ঠারেঠোরে সেবার জানিয়েছিলেন যে, ভারতের মুখোমুখি হতে না হওয়ায় কিউইদের প্রতি কিছুটা কৃতজ্ঞই যেন তিনি। এবারও ভারত হেরেছে কিউইদের কাছে। দুবাইয়ে সেই হারেই একরকম বিশ্বকাপ থেকে বিদায় ঘণ্টা বেজে যায় ভিরাট কোহলির দলের। মরগ্যান তার ইনজুরি জর্জর স্কোয়াড নিয়ে এবারও কিউইদের প্রতি সেরকম কিছুই ভাবছেন কিনা তা অবশ্য জানা যায়নি।
বৈশ্বিক আসরে কিউইদের নিয়ে এমন বয়ান যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে এক শাশ্বত ব্যাপার। ২০১৫ ও ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছে কিউইরা। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেও এসে দাঁড়িয়েছে কেন উইলিয়ামসনের দল। ১৯৯২ সালে পাওয়া আন্ডারডগ তকমা এতদিনে ঝেড়ে ফেলারই কথা ছিল তাদের। কিন্তু এতে কোনো সমস্যাই হচ্ছে নিউজিল্যান্ডের। উল্টো বোলিং অ্যাটাকে নিজেদের অস্ত্রাগারের পরিচিত সব হাতিয়ারে আবারও বেশ ভয়ঙ্করই দেখাচ্ছে তাদের।
দলের স্ট্রাইক বোলার ট্রেন্ট বোল্ট আছেন দারুণ ফর্মে। ইনিংসের শুরু ও শেষে বোলিংয়ে এসে দলকে চালকের আসনে বসাতে পারেন দারুণভাবে। নতুন বলে সুইং ও ডেথ ওভারে ব্লক হোলে বল ফেলতে পারার দক্ষতার সাথে বলতে হয়, দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত এক বোলার এই বাঁহাতি সিমার। তার সাথে আছেন টিম সাউদি। এই সিম স্পেশালিস্টকে আজ বিপক্ষ শিবিরের ক্রিস ওকসের মতো অনুরূপ দায়িত্বই পালন করতে হবে। তবে অভিজ্ঞতায় সাউদি যে এগিয়ে থাকবেন তা বলাই বাহুল্য। স্পিন অ্যাটাকে হয়তো ইংল্যান্ডের চেয়ে এগিয়েই থাকবে নিউজিল্যান্ড, আর সেটাও ইশ সোধির উপস্থিতির কারণেই। সাথে আছেন দারুণ ধারাবাহিক অর্থোডক্স মিচেল স্যান্টনার। ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক ক্রিকেটে সেরা হওয়া ছাড়াও যে এই ফরম্যাটে দুর্দান্ত কার্যকর ক্রিকেট খেলা যায়, সেটাও প্রমাণ করে যাচ্ছেন সোধি ও স্যান্টনার।
সাম্প্রতিক সময়ে নিউজিল্যান্ডের প্রধান চ্যালেঞ্জ তাদের প্রতিপক্ষ না, বরং মরুর বিকেলে প্রচণ্ড গরমে ৫ দিনের মধ্যে ৩টি ম্যাচের খেলার চাপই যেন অন্যতম চিন্তার ব্যাপার। তার উপর কিউইরা শেষ তিনটি ম্যাচ খেলেছে স্কটল্যান্ড, নামিবিয়া ও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে। সেজন্যই, বড় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলার অভ্যাসে মরিচা পড়লো কিনা, সেটাও দেখার বিষয়। তবে অন্যান্য অনেক বড় দলের চেয়েও কেন উইলিয়ামসনের দল ভালোভাবেই জানে কীভাবে আইসিসি টুর্নামেন্টের শিরোপার দিকে সারাক্ষণ চোখ রাখতে হয়। আন্ডারডগ হওয়ার সুবিধা যে এটাই!
Leave a reply