মায়ের পরকীয়ার বলি শিশু, ৬ বছর পর জানা গেল লোমহর্ষক খুনের ক্লু

|

২০১৫ সালে মায়ের পরকীয়ার বলি হওয়া শিশু শিহাব (৮)।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:


২০১৫ সালে মায়ের পরকীয়ার বলি হয়ে শিশু শিহাব (৮) হত্যার মোটিভ ও ক্লু উদ্ধার করেছে ঝিনাইদহ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রায় ৬ বছর পর পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও সিআইডির হাত ঘুরে ঝিনাইদহ পিবিআই মামলাটির রহস্যের জট খুলতে সক্ষম হলো। সেই সাথে আসামিদের গ্রেফতারের পর আদালতে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া ও সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণও সন্নিবেশিত করা হয়েছে।

রোববার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে ঝিনাইদহ পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে খুনের রহস্য উন্মোচনের ব্যাপারে সাংবাদিকদের জানান।

পিবিআই সুত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের প্রবাসী তোয়াজ উদ্দীনের শিশু সন্তান শিহাব (৮) নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের দুই দিন পর ৩০ অক্টোবর শিহাবের লাশ পাওয়া যায় পার্শ্ববর্তী শিবপুর গ্রামের ওসমান আলীর জমিতে। এ ঘটনায় নিহতর মা বিলকিস খাতুন তার পরকীয়া প্রেমিক জমির উদ্দীন পিন্টুর ইন্ধনে ৬ জনকে আসামি করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন।

মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত করে চুয়াডাঙ্গা ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। সর্বশেষ পুলিশ প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে মামলাটি সিআইডি তদন্ত করে। এতে হত্যার প্রধান আসামি লাল্টুকে বাদ দিয়ে আদালতে নিহতের চাচাতো ভগ্নিপতি ঘাতক পিন্টুকে আসামি করে ক্রটিপুর্ন ও দায়সারা চার্জসীট প্রদান করে।

পরকীয়া প্রেমিককে রক্ষা করতে চার্জসীটের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি পিটিশন দাখিল করেন বাদী বিলকিস খাতুন। আর এতেই কপাল পোড়ে পিন্টুসহ অন্যান্য আসামিদের।

চুয়াডাঙ্গার একটি আদালত মামলাটি নতুনভাবে তদন্তের জন্য ঝিনাইদহ পিবিআইকে নির্দেশ দেন। ঝিনাইদহ পিবিআইয়ের এসআই তহিদুল ইসলাম মামলাটির তদন্তভার নিয়ে হত্যার মোটিভ ও ক্লু উদ্ধারের পর প্রধান আসামি ও তার সহায়তাকারীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। এরপর দায় স্বীকার করে আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেন আসামি লাল্টু ও নয়ন।

মামলার সুত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন শিহাব বাড়ির পাশে ইমরানের দোকানে মিষ্টি কিনতে যায়। ফেরার পথে আসামি নয়ন শিহাবকে তার চাচাতো ভগ্নিপতি জমির উদ্দীন পিন্টুর কাছে নিয়ে যায়। সাবেক চরমপন্থী ক্যাডার পিন্টু নয়নকে ৫০০ টাকা দিয়ে শিহাবের বিষয়ে কাউকে কিছু না জানাতে শাসিয়ে দেয়।

এরপর পিন্টুর ঘরে শিহাবকে আটকে রেখে অপহরণকারী চক্রটি গ্রামে নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি মাইকিং করে। কুতুবপুর গ্রামের শ্রী অসিত কুমারের ভ্যানযোগে কলম ও শাহাবুদ্দীন এ প্রচার কাজে অংশ নেয়।

পরিকল্পনা মাফিক রাতে আসামি লাল্টু অপহৃত শিশু শিহাবের মালয়েশিয়া প্রবাসী বাবা তোয়াজ উদ্দীনের কাছে মুক্তপণ দাবী করার পরিকল্পনা নেয়। এসব দেখে শিহাব কান্নাকাটি শুরু করলে শিহাবের কানে জোরে থাপ্পড় মারে আসামি লাল্টু। এতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে শিহাব। চাচাতো ভগ্নিপতি পিন্টুর ঘরের মধ্যে শিশু শিহাবকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর অসিতের ভ্যান যোগে লাশ শিবপুর গ্রামের মাঠে ফেলে আসে তারা। লাশ টানার কাজে ব্যবহৃত ভ্যানটিও পিবিআই উদ্ধার করেছে।

ঝিনাইদহ পিবিআইয়ের এসআই তহিদুল ইসলাম জানান, মূলত মায়ের সাথে পিন্টুর অনৈতিক কাজ দেখে ফেলা ও পরবর্তীতে শিহাবের প্রবাসী বাবার কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের জন্যই অপহরণ ও হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে চক্রটি।

এর আগে, এ মামলার মূল আসামি লাল্টুকে বাদ দিয়েই আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পিবিআইয়ের তদন্তে এজাহারের বাইরে আরও তিনজন আসামির সন্ধান মেলে।

এসআই তহিদুল জানান, মামলাটির তদন্তভার গ্রহণের পর প্রধান আসামি শিবপুর গ্রামের লাল্টুকে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার সমোশপুর গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক কুতুবপুর গ্রাম থেকে জমির উদ্দীন পিন্টু ও অসিত দাসকে গ্রেফতার করা হয়।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply