নিজস্ব প্রতিনিধি:
প্রায় বছর খানেক আগে একজনের অনুরোধে ব্যাংকের হিসাব খোলার জন্য নির্ধারিত ফরমে স্বাক্ষর করেছিলেন। তারপর তিনি আর কোনো দিন ব্যাংকে যাননি, করেননি লেনদেনও। পরে অন্য ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের আবেদন করতে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি রিপোর্টে দেখতে পায়, তার ব্যাংকে ঋণ রয়েছে ৯০ লাখ টাকা! হতবাক হয়ে তিনি খবর নিতে গিয়ে জানতে পারেন, এই তুঘলকি ঘটনা ঘটিয়েছে সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া শাখার এনআরবিসি ব্যাংক। এ ঘটনায় ব্যাংকের গ্রাহক শেখ অহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ব্যাংক ম্যানেজারসহ পাচঁ কর্মকর্তাকে আসামী করে খুলনার দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
থানা মামলা গ্রহণ করে তদন্তের জন্য বিধি-বিধান মোতাবেক দুর্নীতি দমন কমিশন খুলনাকে প্রেরণ করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক মামলার কথা স্বীকারও করেছেন।
খুলনার দৌলতপুর থানায় দাখিলকৃত এজাহারে বলা হয়, রাজিব মটরস স্বত্বাধিকারী শেখ অহিদুল ইসলামের কাছে পাশ্ববর্তী ব্যবসায়ী রাব্বী এন্টারপ্রাইজ মালিক আব্দুল হালিম শেখ এনআরবি ব্যাংকে হিসাব খোলার জন্য ব্যাংকের ফরমে স্বাক্ষর নিয়ে যান। কোনো টাকা জমা না দেয়ায় তার আর বিষয়টি স্মরণে ছিলো না।
এ বছর তিনি খুলনার ব্র্যাক ব্যাংকে একটি ক্রেডিট কার্ড নেবার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি রিপোর্ট দেখা যায়, সাতক্ষীরা কলারোয়ার এনআরবি শাখায় তার ৯০ লাখ টাকার টাইম লোন রয়েছে, যা ০৬/০৯/২০২১ তারিখে নেয়া হয়েছে। যার মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৩ জানুয়ারি, ২০২২।
এই হিসাবে ০৬/০৯/২০২১ থেকে ০৮/১১/২০২১ পযর্ন্ত ৯৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা লেনদেন করা হয়েছে। ব্যাংক থেকে চেক বই গ্রহণ, পে-অর্ডার; এমনকি ব্যাংকের ইন্টারেস্টও পরিশোধ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে এনআরবি ব্যাংক কলারোয়া শাখার ম্যানেজার কাজী মোশারেফ হোসেন, ম্যানেজার (অপারেশন) শাহেদ শরীফ, জুনিয়ার অফিসার বদিউর রহমান, স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম শেখসহ ৫ অজ্ঞাত কর্মকর্তার নামে জালিয়াতি করে ঋণ দেয়া হয়। এজাহারে বলা হয় তার রিক্যুইজিশন স্লিপ, কোন আবেদন না করা এবং লেনদেনের কোন অ্যালার্ট ম্যাসেজ মোবাইলে না আসায় তিনি এ মামলা দায়ের করেন।
দৌলতপুর থানা মামলাটি গ্রহণ করে তদন্তর জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন খুলনার কাছে প্রেরণ করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন খুলনা উপ-পরিচালক নাজমুল আহসান বলেন, এ অভিযোগটি মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) তারা পেয়েছেন, প্রধান কার্যালয়ের অনুমতির পর তারা তদন্ত শুরু করবেন বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে এনআরবি ব্যাংক কলারোয়া শাখার ম্যানেজার কাজী মোশারেফ হোসেন বলেন, বিষয়টি আমাদের হেড অফিস থেকে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। শেখ অহিদুল ইসলাম অভিযোগ করার পর এই টাকা সমন্বয় করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ঠিকাদারি কাজের বিপরীতে এই ঋণ প্রদান করা হয়েছে।
এ বিষয়ে শেখ অহিদুল ইসলাম জানান, তিনি কোনদিন ব্যাংকে যাননি, হিসাব খোলা ফরম ছাড়া কোন কাগজে তিনি সই করেননি, কোনো লেনদেন বা চেক বইয়ের জন্যও আবেদন করেননি। এসবের কিছুই না করেও সেখানে ৯০ লাখ টাকার ঋণ! এটা বড় ধরনের জাল জালিয়াাতি আর এর সাথে ব্যাংকের বড় সিন্ডিকেট চক্র জড়িত। তিনি ব্যাংকে অভিযোগ করার পর তারা টাকা সমন্বয় করে দিয়েছে।
তিনি আরও জানান, ব্যাংকের ম্যানেজার এখন তাকে বারবার মোবাইল করে ক্ষমা চাচ্ছেন এবং অভিযোগ না করার জন্য পীড়াপীড়ি করছেন। তবে এই জাল ঋণ জালিয়াতি চক্রকে আইনের আওতায় আনার জন্য মামলা দায়ের করেছেন বলে জানান তিনি।
/এসএইচ
Leave a reply