স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সেই যোদ্ধারা

|

অস্ত্র নয়, ফুটবলকেই তারা বানিয়েছিলেন দেশ মাতৃকার মুক্তির অস্ত্র। সংগৃহীত ছবি।

বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীতে আপন আলোয় উদ্ভাসিত স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল। ১৯৭১ সালে রনাঙ্গনে যখন অস্ত্র হাতে লড়ছে মুক্তিযোদ্ধারা, তখন তানভীর মাজহার তান্না আর জাকারিয়া পিন্টুদের নেতৃত্বে ৩৪ থেকে ৩৬ জনের একটি ফুটবল দল জনমত গঠন ও অর্থ সংগ্রহে ভারতের মাটিতে নেমে পড়েছিল প্রদর্শনী ম্যাচে। মোট ১৬টি ম্যাচে অংশ নেয় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল। ফুটবলারদের বেশ কয়েকজন আবার সশস্ত্র সংগ্রামেও ভূমিকা রাখেন। বিজয়ের এই দিনে স্মরণ করছি জাতির অন্যতম এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের।

…মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি। একটি ফুল, একটি হাসিমুখ, একটি সবুজ গালিচা, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। এসবের জন্যই তো যুদ্ধ। যার ফল স্বাধীনতা, আর আজকের স্বাধীন দেশের ৫০ বছর।

প্রতিটি সকাল, প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি শব্দে মিশে আছে স্বাধীনতা। মুক্ত আকাশে পাখা ঝাপটানো পাখি হয়ে আসা স্বাধীনতা। ১৬ ডিসেম্বর, বিজয় দিবস। যে দিনটির জন্য দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করতে হয়েছে। সবাই সবার জায়গা থেকে লড়েছে জীবন বাজি রেখে। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ৩৪ জন।

যাদের স্বীকৃতি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্য, ফুটবল পায়ে মুক্তিসংগ্রামের অগ্রণী সৈনিক। দলটির ম্যানেজার ছিলেন তানভীর মাজহার তান্না, খেলোয়াড় হিসেবে যিনি ছিলেন মূলত ক্রিকেটার।

ওরা বিশ্বের ইতিহাসে যুদ্ধকালীন সময়ে ফুটবল পায়ে একমাত্র যোদ্ধা দল। তারা স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল। জাকারিয়া পিন্টুর অধিনায়কত্বে এই দলটিতে ছিলেন ইতিহাসের নামকরা সব ফুটবলার। অমলেশ সেন, কাজী সালাহউদ্দিন, এনায়েতুর রহমান, নওশেরুজ্জামান নামগুলো আজও ভাস্বর আপন আলোয়। ইতিহাসের প্রথম স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্য ছিলেন তারা। জনমত গঠন ও অর্থিক সহায়তার উদ্দেশ্যে গঠিত দলটি যুদ্ধের সময় ফুটবল খেলেছে পশ্চিম বাংলার আনাচে কানাচে।

যার শুরুটা হয়েছিল নদিয়ায়। সেই ম্যাচেই জাতীয় পতাকা উড়িয়েছিলেন জাকারিয়া পিন্টু, প্রতাপ শঙ্কর হাজরারা গেয়েছিলেন জাতীয় সঙ্গীত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তারা যেন ছিল আলাদা একটা ব্রিগেড। অস্ত্র নয়, ফুটবলকেই তারা বানিয়েছিলেন দেশ মাতৃকার মুক্তির অস্ত্র। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরেছিলেন তারা, অথচ বাংলাদেশ তখনেও ‘দেশ’ হিসেবে স্বীকৃতিই পায়নি।

১৯৭১ সালের জুলাইয়ের সেই দিনটি ইতিহাসের উজ্জ্বল এক অধ্যায়। জাতীয় পতাকা উড়িয়ে, জাতীয় সংগীতের সঙ্গে ঠোঁট মিলিয়ে ফুটবলাররা সেদিন পৃথিবীর ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ই রচনা করেছিলেন। যে দলটি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল নামের আলাদা একটি পরিচয় নিয়ে মহিমান্বিত হয়ে আছে ইতিহাসে। কামানের গোলার মত তাদের পায়ে ঝড়া আগুন সেসময় অনেককে উদ্বুদ্ধ করেছিল মুক্তিযুদ্ধে। স্বপ্ন দেখিয়েছিল লাল সবুজের স্বাধীন বাংলাদেশের।

দেশ স্বাধীন হয়েছে। একে একে কেটে গেছে ৪৯টি বছর। ৫০ বছরের সুবর্জণয়ন্তীতে পা দিয়েছে ১৭ কোটি মানুষ। এমন দিনে যমুনা নিউজ শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করছে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যদের।

/এডব্লিউ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply