গাঁজা গাছ থেকে তৈরি হতে পারে শিশুদের খিঁচুনির ওষুধ : গবেষণা

|

খিঁচুনির ওষুধ তৈরি হতে পারে গাঁজা গাছ থেকে। ছবি: সংগৃহীত।

শিশুদের খিঁচুনি পুরোপুরি সারানোর প্রতিষেধক হয়ে উঠতে পারে গাঁজা! গাঁজা গাছের কাছে রয়েছে সেই ওষুধ তৈরির উপাদান! সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটিই জানানো হয়েছে।

মৃগি রোগে আক্রান্ত শিশুদের খিঁচুনি হয়। খিঁচুনি হয় রক্তে শর্করার মাত্রা অত্যধিক বেড়ে গেলেও। ক্যালসিয়ামের মাত্রা বাড়লেও হয় খিঁচুনি। এমন অনেক ধরনের খিঁচুনি রয়েছে, যেগুলি বাজারে প্রচলিত ওষুধে পুরোপুরি সারানো যায় না।

এবার সেই সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা দেখাল একটি গবেষণা। যাতে দেখানো হয়েছে, গাঁজা গাছে যেসব রাসায়নিক যৌগ থাকে সেই সবগুলো দিয়ে বানানো একটি ওষুধেই হয়ে যায় কেল্লাফতে। শিশুদের খিঁচুনি সারাতে সেই ওষুধ সফল হচ্ছে ৮৬ শতাংশ ক্ষেত্রে। জটিল ধরনের খিঁচুনি পুরোপুরি সারাতে বাজারে প্রচলিত ওষুধের সাফল্য মাত্র এক-তৃতীয়াংশ বা আরও কম।

বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, এর ফলে, শিশুদের জটিল কয়েক ধরনের খিঁচুনি সারাতে আগামী দিনে আরও কার্যকরী ওষুধ বাজারে আসার পথ খুলে দিতে পারে এই গবেষণা।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খিঁচুনি সারাতে এখন যে ওষুধগুলির ব্যবহার বেশি, তার কোনওটাতেই গাঁজা গাছের কোনও যৌগ থাকে বলে জানা নেই। জটিল কয়েকটি খিঁচুনি সেই সব ওষুধে পুরোপুরি সারানোও সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে গাঁজা গাছের এই সব যৌগ দিয়ে বানানো ওষুধ যদি এত কার্যকর হয়, তাহলে ‘ড্র্যাভেট সিনড্রোম’ এর মতো জটিল কয়েক ধরনের খিঁচুনি রোগের চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনার পথ খুলে যাবে।

গাঁজা গাছে থাকা সবকয়টি রাসায়নিক যৌগ দিয়ে বানানো একটি ওষুধ নিয়ে এই গবেষণাটি চালানো হয়েছে ব্রিটেনে। সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘বিএমজে পিডিয়াট্রিক্‌স ওপেন’এ।

শিশুদের খিঁচুনি সারাতে গাঁজা গাছের কোনও ভূমিকা থাকতে পারে কি না, তা খতিয়ে দেখতে এর আগে কয়েকটি গবেষণা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকায়। সেসব গবেষণা জানিয়েছে, গাঁজা গাছে থাকা বিশেষ একটি যৌগ ‘ক্যানাবিডায়অল (সিবিডি)’ দিয়ে কোনও ওষুধ বানানো হলে তা কয়েকটি ক্ষেত্রে শিশুদের খিঁচুনি সারাতে কিছুটা কার্যকরী হয়। তবে ‘ড্র্যাভেট সিনড্রোম’ এর মতো জটিল কয়েক ধরনের খিঁচুনি সারাতে ততটা কার্যকরী হয় না সিবিডি।

ব্রিটেনে সাম্প্রতিক গবেষণাটি চালানো হয়েছে গাঁজা গাছে থাকা সবকটি রাসায়নিক যৌগ দিয়ে বানানো একটি ওষুধ দিয়ে। সেই যৌগগুলির মধ্যে যেমন রয়েছে সিবিডি, তেমনই রয়েছে তার্পিন, ফ্ল্যাভোনয়েডস-এর মতো গাঁজা গাছে থাকা আরও কয়েকটি প্রধান যৌগ।

গবেষকরা দেখেছেন, এই যৌগগুলি সিবিডি’র চেয়েও বেশি কার্যকর হচ্ছে শিশুদের খিঁচুনি সারাতে। শুধু সিবিডি দিয়ে ওষুধ বানানো হলে তা যতটা কার্যকর হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর হচ্ছে গাঁজা গাছে থাকা তার্পিন, ফ্ল্যাভোনয়েডস এর মতো অন্য কয়েকটি যৌগ দিয়ে ওষুধ বানালে।

প্রায় পৌনে দুইশ’ বছর আগে আয়ারল্যান্ডের এক চিকিৎসক প্রথম ইঙ্গিত দিয়েছিলেন গাঁজা যে খিঁচুনি সারাতে কাজে লাগতে পারে। কিন্তু তার পর গাঁজা নিয়ে বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় তার গবেষণা আর বেশি দূর আগাতে পারেনি।

আরও পড়ুনডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পান পাতার ব্যবহার

আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) সম্প্রতি এমন একটি ওষুধ অনুমোদন করেছে। তার নাম— ‘এপিডায়োলেক্স’। কিন্তু তার পর আমেরিকাতেই বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ড্র্যাভেট সিনড্রোম এর মতো জটিল কয়েক ধরনের খিঁচুনি সারাতে এপিডায়োলেক্সের সাফল্যের হার মাত্র ৩২ শতাংশ।

সে ক্ষেত্রে গাঁজাই হয়তো আগামী দিনে শিশুদের জটিল খিঁচুনি সারানোর অব্যর্থ ওষুধ বাজারে আসার পথ খুলে দেবে, এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট, মেডিসিন নেট।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply