শেষ হতে চলেছে আরেকটি বছর। বরাবরের মতো এ বছরও অনেক রেকর্ড ও স্মরণীয় মুহূর্তের সাক্ষী থেকেছে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন। ব্যত্যয় ঘটেনি ফুটবল বিশ্বেও। ফুটবল বিশ্বের সেরা দুই তারকা লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। যদিও দু’জনই ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় রয়েছেন, তবুও রবার্ট লেওয়ানডোস্কি, কিলিয়ান এমবাপ্পে এবং মোহাম্মদ সালাহদের উত্থানের যুগেও সেরা ফর্মেই রয়েছেন তারা।
তবে বিশ্বসেরা এই দুই ফুটবলারের মধ্যে কে সেরা, এই বিতর্ক বহু পুরনো। দু’জনকে নিয়ে এখনো যেভাবে চর্চা হয়, অন্য কারও ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। মাঠের লড়াই কিংবা রেকর্ডবুকের দৌড় সবখানেই তাদের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই দেখা যায়।
চলুন পেছন দেখা যাক, ২০২১ সালে কেমন কেটেছে মেসি-রোনালদোর।
বছরজুড়ে ফুটবলের আলোচিত ঘটনাগুলোর দিকে চোখ ফেরালে শীর্ষেই থাকবে মেসি-রোনালদোর দলবদল। গত মৌসুম তো বটেই সম্ভবত ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর দলবদলের সাক্ষী হয়েছে সমর্থকরা। মাস খানেকের ব্যবধানে বিশ্বসেরা দুই ফুটবলারের ঠিকানাবদল, তাও আবার চূড়ান্ত নাটকীয়তার পর। গত আগস্টের আগেও যা ছিল কল্পনাতীত, তাই হয়েছে বাস্তব। মেসি-রোনালদো, বর্তমান ফুটবল চলচ্চিত্রের দুই সেরা শিল্পীই মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে বদলে ফেলেন নিজেদের আস্তানা।
একজন যখন নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় বার্সেলোনার সাথে ২১ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে যোগ দেন অচেনা গণ্ডির পিএসজিতে, তখন আরেকজন নিজের পুরনো আধিপত্য পুনঃস্থাপন করার লক্ষ্যে এক যুগ পর স্বপ্ন নিয়ে প্রত্যাবর্তন করেন ঘরের ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে।
লিওনেল মেসি
বার্সা ছাড়ার আগে কোপা দেল রে শিরোপা জিতিয়ে গেছেন মেসি। এছাড়া লিগ শিরোপার দৌড়েও অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদকে টপকে ভালো অবস্থানেই ছিল কাতালান ক্লাবটি। পিএসজিতে থিতু হওয়ার আগে এ বছরে মেসি পুরনো ক্লাবের হয়ে ২৯ ম্যাচে ২৮ গোল করেছেন, করিয়েছেন আরও ৮টি।
যদিও নতুন ক্লাবে খুব একটা স্বস্তিতে নেই আর্জেন্টাইন এই ফুটবল জাদুকর। যেন ক্যারিয়ারের সেরা দুঃসময় পার করেন মেসি। অভিষেক গোলের দেখা পেতেই অপেক্ষা করতে হয়েছিল অনেকটা সময়। লিগ ওয়ানে ১১ ম্যাচে করেছেন মাত্র একটি গোল। তবে পিএসজির জার্সিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ছন্দেই আছেন তিনি। ৫ ম্যাচে করেছেন ৫ গোল।
তবে জাতীয় দলের জার্সিতে মেসির জন্য ২০২১ সালটা আক্ষেপ ঘোচানোর বছর হয়েই থাকবে। গত ১৮ বছর ধরে যে শিরোপা জেতা হয়নি, খুব কাছে গিয়েও শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হয়নি মেসির, এবার সেটিই যেন বাস্তবে রূপ নিলো। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতেছে আলেবিসেলেস্তেরা। এছাড়া বছরের শেষ দিকে জিতে নিয়েছেন রেকর্ড সপ্তম ব্যালন ডি’অর।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো
রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়ার পর য়্যুভেন্তাস ঘুরে রোনালদো ফেরেন সেই পুরনো ঘরেই। যদিও ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে প্রথম দিকে গোল বন্যায় ভাসলেও মুদ্রার উল্টো পিঠও দেখে ফেলেন সিআর সেভেন। দলের বাজে পারফরম্যান্সের কারণে চাকরি হারান সাবেক কোচ ওলে গানার সোলশায়ার। তবে তারপরও দলের অবস্থা ফেরেনি। এদিকে, দলের বাজে অবস্থায় সমালোচনার সন্মুখীন হচ্ছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও। অনেকেই বলছেন, এ মৌসুমে ইংলিশ ক্লাবটির হয়ে ১৮ ম্যাচে ১৩ গোল করলেও রোনালদোর সেই আগের ধার আর নেই।
এ ছাড়া জাতীয় দলের হয়ে এ বছর কোনো শিরোপা জিততে পারেনি রোনালদো। সবশেষ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ ষোলোয় গিয়ে ছিটকে যায় তার দল পর্তুগাল। তবে ব্যক্তিগত অনেক অর্জনে বছরটা রাঙিয়েছেন তিনি। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ইরানের আলী দাইয়ির গড়া ১০৯ গোলের রেকর্ড ছুঁয়েছিলেন, এরপর সেটিকে পেরিয়ে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন রোনালদো। পর্তুগালের জার্সিতে রোনালদোর গোল সংখ্যা এখন ১১৫ গোল!
২০২১ সালে জাতীয় দলে মেসি-রোনালদো
ম্যাচ গোল অ্যাসিস্ট শিরোপা
মেসি- ১৬ ৯ ৫ কোপা আমেরিকা
রোনালদো- ১৪ ১৩ ১
Leave a reply