অধিনায়ক স্মিথের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বল বিকৃতি ঘটনায় বিশ্ব জুড়ে চলছে ব্যাপক তোলপাড়। কেউ সহানুভুতির হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, কেউ কেউ নানা বাক্যবাণে জর্জরিত করছেন অভিযুক্তদের।
এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া দলকে নিয়ে নানা রকম ট্রলও করছেন ইংলিশ ক্রিকেট ফ্যানরা, তাদের সাথে কিউই সমর্থকরাও যোগ দিয়েছেন।
এই ঘটনার জের ধরে আগেও বহুবার এমন ঘটিয়েছেন বলে কেউ কেউ সন্দেহের তীর ছুঁড়ে দিচ্ছেণ বর্তমান ও সাবেক অজি খেলোয়াড়দের দিকে।
কী বলেন পাকিস্তানি খেলোয়াড়রা? কেন পাকিস্তানি খেলোয়াড়দেরই বলতে হবে? কেনইবা বলবে না, তারাই তো ক্রিকেট বিশ্বে রিভার্স সুইং-এর উদ্ভাবক।
শনিবার পাকিস্তানের সাবেক ফাস্ট বোলার ওয়াকার ইউনুস এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন। নতুন বল হাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অন্যতম ভয়ংকর বোলার হিসেবে পরিচিত তিনি। একই সাথে প্রচলিত সুইং ও রিভার্স সুইংয়ে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত।
তো কী বলেছেন এই খ্যাতি ফাস্ট বোলার। তিনি বলেছেন, “অবশ্যই, প্রতারণা ছাড়াও রিভার্স সুইং করা সম্ভব। বর্তমানে বেশিরভাগ বোলার তা করে থাকে ও উইকেট পায়, এবং এর মাধ্যমে দলের জয়ে ভূমিকা রাখে।”
গতি ও সুইয়ের এই মাস্টার ফাস্ট বোলার জোর দিয়ে বলেন, “বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বলে কেন খেলা হয়? আমার মতে, ডিউক বল সবচেয়ে ভালো, এবং এর কাছাকাছি মানের বল হচ্ছে এসজি। এই বল দু’টি সুইংয়ের জন্য সবচেয়ে ভালো, এবং এগুলো সব দেশে অনুষ্ঠিত খেলায় ব্যবহার করা উচিত।”
তিনি আরও বলেন, “বল দু’টির ব্যবহার বোলারদের সাহায্য করবে, এবং ভালো ব্যাটসম্যান তৈরিতেও ভূমিকা রাখবে। আমাদের উচিত সমস্যার সমাধান করা, একে অপরকে দোষারোপ না করা।”
শুধু ওয়াকার ইউনুস বলছেন না যে বল বিকৃতি ছাড়া রিভার্স সুইং সম্ভব। খোদ সরফরাজ নওয়াজও বলছেন একই কথা, যিনি ক্রিকেট বিশ্বে রিভার্স সুইয়ের প্রবর্তক হিসেবে সুপরিচিত।
সরফরাজ বলেন, “রিভার্স সুইংকে প্রতারণা বলা হাস্যকর। বল বিকৃতি ছাড়াই রিভার্স সুইং করা সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, “নতুন বলে প্রচলিত সুইং করানো যায়, এবং পুরাতন বলে রিভার্স সুইং। পরীক্ষাগারেও প্রমাণিত যে রিভার্স সুইং করানো সম্ভব।”
সরফরাজ নেওয়াজ ৫৫ টেস্টে ১৭৭ উইকেট নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ১৯৭৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মেলবোর্নে ৮৬ রানে দিয়ে নিয়েছিলেন ৯ উইকেট। আবার সেই ৯ উইকেটের মধ্যে এক স্পেলে ৩৩ বলে মাত্র ১ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ৭ট উইকেট।
সরফরাজ বলেন, “এ বিদ্যা ইমরান খানকে শেখানো পর সে এটিকে আরও উন্নত করেছিল। পাশাপাশি সে তা ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনুসকেও শিখিয়েছিল। ওই সময়ে এটি প্রতারণা বলা হত। কিন্তু ইংলিশ বোলাররা এ বিদ্যা শেখার পর তা হয়ে গেল শিল্প।”
তিনি বলেন, “এটি তখনও শিল্প ছিল, ভবিষ্যতে থাকবে। কিন্তু এর জন্য বল বিকৃতি ঘটানো প্রতারণা। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে অস্ট্রেলিয়া যা করেছে সেটা প্রতারণা, এবং তারা কঠোর সাজা পেয়েছে।”
রিভার্স সুইয়ের এই প্রবর্তক বলেন, “প্রচলিত সুইং খুব সাধারণ-স্লিপের খেলোয়াড় বরাবর সেলাইকে কৌণিকভাবে ধরে যদি বল ছোঁড়া হয় তবে তা ডান-হাতি ব্যাটসম্যান থেকে দূরে সরে যাবে। যদি লেগ সাইডকে লক্ষ্য করে সেলাইকে কৌণিকভাবে ধরে বল ছোঁড়া হয় তবে তা ব্যাটসম্যানের দিকে আসবে। আর রিভার্স সুইং হচ্ছে এই বিষয়টির পুরোপুরি বিপরীত।”
বোলার প্রচলিত সুইং কিংবা রিভার্স সুইং যাই করাতে পারেন না কেন, সেটি বোলারের কৃতিত্ব। যুগ যুগ ধরে বোলারদের সুইং কারিশমা দেখেছে ক্রিকেট দর্শকরা।
কিন্তু উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, খেলোয়াড়দের নিজে থেকে বলের আকৃতি কিংবা পালিশ পরিবর্তন অথবা অন্য কোনো যে কোনো কিছুই করাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আইন অনুসারে অপরাধ।
যমুনা অনলাইন: এফএইচ
Leave a reply